রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি/
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সারাদেশের মতো নেত্রকোনায়ও পুরোদমে চলছে পূজার প্রস্তুতি। নেত্রকোনা সদরসহ দশ উপজেলার মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
দুর্গাপূজা আগামী ২০ অক্টোবর, ২ কার্ত্তিক, শুক্রবার ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হয়ে ২৪ অক্টোবর ৫ কার্তিক মঙ্গলবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজা।
শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ হলো দেবী দুর্গার বাহন সিংহসহ মহিষাসুরের প্রতিমা সঙ্গে দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী, দেবতা কার্তিক, গণেশ, এবং তাদের বাহন পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর আর ময়ূর। উৎসব সামনে রেখে, প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। প্রতিমা শিল্পীদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের কারিগররাও। পূজা শুরুর আগেই প্রতিমা গুলোকে তুলতে হবে মণ্ডপে। ইতোমধ্যে প্রতিমার কাঠামোর মাটির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর শুরু হবে রং ও সাজসজ্জার কাজ।
নেত্রকোনার কয়েকটি উপজেলায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দম ফেলার সময় নেই কারিগরদের। সুনিপুণ হাতে মাটি লাগানোর কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেউ কাদা তৈরি করছেন, কেউ কাদা দিয়ে হাত-পা বানাচ্ছেন। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। মাটি দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করছেন কারুকার্যময় অলঙ্কার। আর সেই অলঙ্কার প্রতিমার শরীরে জড়িয়ে দিয়ে সাজিয়ে তুলছেন অনন্যা রূপে। দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন দেবী দূর্গাকে সকলের কাছে অপরূপ সাজে প্রদর্শন করার জন্য। প্রতিমা তৈরিতে কোন ধরনের ঘাটতি রাখতে চাইছেন না কারিগররা।
এমনই এক প্রতিমা শিল্পী কর্ণধার সুদীপ্ত পাল বলেন, আমি দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও সকল ধরনের প্রতিমা আমরা তৈরি করি। এবার ১২টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে রং, তুলি ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রতিমা তৈরির মজুরি কম পাওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে শিল্পীদের।তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি।
বারহাট্টা গড়মা কালীবাড়ি পূজার প্রতিমা তৈরির কারিগর রতন পাল বলেন, আগের মতো মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যাবহার না করায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালীন প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে সারা বছর সংসার চালাই। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু পূজা কমিটি প্রতিমা তৈরির মজুরি বাড়াচ্ছেন না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা তা আর হচ্ছে না। প্রতিমা কারিগর আরও জানান, চলতি বছর আমার হাতে মোট ১৪ টি প্রতিমা তৈরির কাজ রয়েছে।
নেত্রকোনা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির তথ্যমতে, এ বছর জেলা শহরসহ ১০টি উপজেলায় ৫৬০টি মণ্ডপ ও মন্দিরে পূজা উদযাপিত হবে। নেত্রকোনা পৌরসভায় ৫৬টি, সদর উপজেলায় ৬৩টি, দুর্গাপুরে ৬৬টি, কলমাকান্দায় ৬০টি, বারহাট্টায় ৫৫টি, কেন্দুয়ায় ৫২টি, আটপাড়ায় ৪২টি, মদনে ১৬টি, মোহনগঞ্জে ৪২টি, খালিয়াজুরিতে ৪৪টি ও পূর্বধলায় ৬৪টি পূজা মণ্ডপ সাজানোর কাজ চলছে।
নেত্রকোনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র পন্ডিত বলেন, জেলার ১০টি উপজেলার সব মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গোৎসবের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে। এরই মধ্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বারহাট্টা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার সাহা সেন্টু বলেন, ‘আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে শেষ হবে এবাবের দুর্গোৎসব। দেবীর আগমনে বিশ্ব হবে শান্তিময়, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে উদয় হবে শুভ শক্তির এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। এর মধ্যেই কোনো কোনো এলাকায় প্রতিমাতে রং তুলির কাজ চলছে। এবছর বারহাট্টা উপজেলায় ৫৫ পূজামন্ডপে পূজা উদযাপন করা হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য কয়েক স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। নেত্রকোনা জেলায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে