রিপন কান্তি গুণ, বিশেষ প্রতিনিধি (নেত্রকোনা): টানা বৃষ্টি আর বন্যার প্রভাবে আবার আগুন লেগেছে নেত্রকোনার নিত্যপণ্যের বাজারে। নিত্যপণ্যের আকাশছোঁয়া দামে ভোগান্তিতে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মধ্যবিত্তের দশাও করুণ। ফলে অসহনীয় দিন কাটছে তাদের।
সরেজমিনে পৌর শহরের মাছবাজার, ঘুষেরবাজার, বড়বাজার, রেলক্রসিং বাজার, আনন্দবাজারসহ জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে।। সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে আদা, রসুন, কাঁচা মরিচের দাম। সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে মাছের দামও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারী বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে জেলার বেশিরভাগ সবজি খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাজারগুলোতে শাকসবজি সরবরাহ কম। ফলে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম।
বরাবরের তুলনায় শহরের বিভিন্ন বজারে সবজি বিক্রেতার সংখ্যাও কম দেখা গেছে। নিত্যপন্যের দাম বৃদ্ধি ও বন্যা পরিস্থিতির কারণে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে।
শহরের সাতপাই রেলক্রসিং বাজারের সবজি বিক্রেতা হারুন মিয়া সঙ্গে বজার পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললে তিনি জানান, বন্যায় পানি বৃদ্ধির কারণে বেশিরভাগ এলাকার শাকসবজির খেত নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে আড়ত থেকে আমাদের বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হচ্ছে। আড়ত থেকেই আমাদের প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে কিনেতে হচ্ছে। সবজির দাম বেশি হওয়ার কারণে বাজারে ক্রেতার সংখ্যাও তুলনামূলক কমে গেছে।
পৌর শহরের ঘুষেরবাজারে বজার করতে আসা মুক্তারপাড়া এলাকার মোখলেছুর রহমান বলেন, বন্যার কারণে বাজারে সবজি নেই বললেই চলে। যাও পাওয়া যায়, দাম প্রায় দ্বিগুণ যা আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের হাতের নাগালের বাইরে।
বারহাট্টা গোপালপুর বাজারের ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী স্বপন চৌধুরী বাজারের তালিকায় রয়েছে- আলু, সবজি, আদা, রসুন, কাঁচামরিচ, মাছসহ আরও অনেক পণ্য, তবে দাম বেশি হওয়ার কারণে অনেক কিছুই কেনা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, প্রয়োজন মতো বাজার করা সম্ভব হয় না আমার মতো অনেক মধ্যবিত্তের। উপার্জন আগের মত থাকলেও অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। যা যা কিনতে এসেছি তা সব কেনা সম্ভব হয় নাই। দামের কারণে স্বল্প আয়ে সবকিছু কিনতে পারাটা খুবই কষ্ট দায়ক।
মোহনগঞ্জ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী কাজল সরকার বলেন, চাষের মাছ ও দেশিয় বেশিরভাগ মাছে দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
গত সপ্তাহে রুই ও কাতলা মাছের দাম কেজি প্রতি ছিল ৩০০-৩৫০ টাকা, চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকায়। ছোট মাছ কেজি প্রতি বেড়েছে ৮০-১০০ টাকা। বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। প্রতি কেজি ইলিশ ১৮শ' থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৪শ' থেকে ১৬শ' টাকা।
বারহাট্টা আসমা বাজারে বাজার করতে আসা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক কাজল সরকার অভিযোগ করে বলেন, বন্যার দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা চড়া দামে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন। এসব সবজি তো সারা দেশেই চাষ হয়। আর সারা বছরই বেশির ভাগ সবজিই বিভিন্ন এলাকা থেকে আমদানি করা হয়। তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই সবকিছু অল্প অল্প করে কিনলাম।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির অজুহাতে সবজির দাম আরও বেড়েছে। বেশিরভাগ সবজি কিনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। আবার কিছু সবজির দাম কেজি প্রতি শতকও ছাড়িয়েছে। বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বেগুনের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। কাকরোলের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, পটল ও ঢ্যাঁড়শ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে কাঁচা মরিচের দাম। বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ২৪০ থেকে ২৭০ টাকায়। কারণ হিসেবে বৃষ্টি ও বন্যার কথা বলছেন বিক্রেতারা।
পৌর শহরের মাছবাজারে গিয়েও দেখা গেল দাম বৃদ্ধির চিত্র। দরদামে ব্যস্ত ক্রেতারা খুশি নন দাম শুনে। বাড়তি দামে পছন্দের পণ্য না নিয়ে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের পণ্যের দিকে ঝুঁকতে হচ্ছে মধ্যবিত্তকে। ক্রেতাদের দাবি, বাজার তদারকি বাড়িয়ে নিত্যপণ্যের দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার।