প্রিন্ট এর তারিখঃ অগাস্ট ১৮, ২০২৫, ১:২৫ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ অক্টোবর ১৫, ২০২৪, ১০:৫১ পি.এম
বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে, কিন্তু কোন প্রভূ আমরা মেনে নেব না- ডা: শফিকুর রহমান

গোলাম সারোয়ার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যুরোঃ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ছিল মজলুম এবং রাস্তায় যে ভাইটি ভিক্ষা করতেন তিনিও মজলুম। কারণ ওই সব ভিক্ষুককে চাঁদা দিতে হতো গুণ্ডাদের কাছে। চাঁদা না দিলে তারা ভিক্ষা করতে পারতেন না। সারাদিন ভিক্ষা করে যা থাকত তা দিয়ে আবার সংসার চলতনা। কারণ ৩০ টাকার পেঁয়াজ ৩০০ টাকায় কিনতে হতো। এ দুষ্ট সিন্ডিকেট করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রী থেকে শুরু করে তার চেলা চামুণ্ডুরা। ৫ আগস্ট আমাদের ছেলেরা নতুন করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। কিন্ত দূর্ভাগ্যবশত এখনো সে সিন্ডিকেট ভাঙ্গা সম্ভব হয়নি। দ্রব্য মূল্যের লাগাম টানতে হলে সিন্ডিকেট ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে হবে।মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন পৌর মুক্তমঞ্চে জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা জামায়াতের আমীর গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী সম্মেলনে বক্তৃতা করেন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা ও কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের টিম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা ও কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চলের টিম সদস্য সাবেক জেলা আমীর অধ্যক্ষ কাজী নজরুল ইসলাম খাদেম, জেলা নায়েবে আমীর কাজী ইয়াকুব আলী, জেলা সেক্রেটারি মুহা. মোবারক হোসাইন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম ভূইয়া প্রমুখ।কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডা: শফিকুর রহমান আরো বলেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর একটি দলের ওপর যে রকম জুলুম করা হয়েছে বাংলাদেশের অন্য কোনো দলের ওপর সে জুলুম করা হয়নি। সে দলটার নাম হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু আমরা আগেই বলেছি আমরা কারো ওপর প্রতিশোধ নেব না। অর্থাৎ আমরা সামগ্রিকভাবে ক্ষমা করে দিতে চাই কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে যে অপরাধ করেছেন ইনসাফের দাবি হচ্ছে তাকে তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু তাই বলে আমরা কেউ আইন হাতে তুলে নেব না।তিনি বলেন, আমরা বৈষম্যহীন ও শোষনমুক্ত একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এ জন্য আমরা ৪১ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছি। এর মধ্যে ১০ দফা অন্তর্তীকালীন সরকারের নিকট বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছি। আমরা একটি পরিপূর্ণ বিপ্লবের স্বপ্ন দেখি। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশে নারী, পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে কোন মানুষ তার ন্যায্য নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেনা। বিভিন্ন জাতি ধর্মের মানুষ মিলেমিশে সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটি অহিংসমূখ সমাজ গড়ে তুলবে- আমরা সে সমাজের স্বপ্ন দেখি। আমরা স্বপ্ন দেখি, প্রত্যেক আদম সন্তান তার মায়ের পেট থেকে জন্ম নেয়ার পরে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সকল অধিকার পাবে। তার বাঁচার অধিকার, চিকিৎসার অধিকার, শিক্ষার অধিকারসহ প্রত্যেকটি অধিকার রাষ্ট্র তাকে দিতে বাধ্য থাকবে। এরপর শিশু থেকে এসব টগবগে যুবক-যুবতী যখন লেখাপড়া করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসার পাঠ চুকিয়ে বের হবে - বেকারত্বের অভিশাপ তাকে গ্রাস করবে না। আমরা এমন একটি শিক্ষা আমাদের সন্তানদের হাতে তুলে দিতে চাই, যে শিক্ষা তাদেরকে নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে, পাশাপাশি তাদের হাত কর্মীর হাতে পরিণত হবে। বেকারত্বের অভিশাপে আর কোন যুবক-যুবতীকে আত্মহত্যা করতে হবে না ,বিচার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যে সমাজে একজন বিচার প্রার্থীকে আদালত প্রাঙ্গনে বিভিন্ন প্রকার হয়রানি হতে হবে না। কোন বিচারক তার আসনে বসে আল্লাহকে ছাড়া আর কোন রাষ্ট্রশক্তিকে পরোয়া করবে না। রাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী বিচার কার্য পরিচালনা করবে। কোন বিচারক ঘুষ খায়- এ লজ্জাজনক কথা আমরা আর শুনতে চাই না। আমরা এমন একটি বিচার ব্যবস্থা চাই, যে বিচার ব্যবস্থায় উঁচু নিচু কাউকে মাপা হবে না। বিচার প্রার্থীকে বিচার প্রার্থী হিসেবে দেখবে। কেউ যদি মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আদালতে হাজির হয়, তাহলে মিথ্যা অভিযোগ করার জন্যও তাকে দন্ড দিতে হবে। আবার যদি সঠিক অভিযোগ নিয়ে কেউ হাজির হয়, তাহলে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করে তাকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না ,আমীরে জামায়াত বলেন, আমরা এমন একটি দেশ চাই, যে দেশ অন্য কোন শক্তি বা দেশের অধীনতা মেনে নেবে না। পৃথিবীর অন্য দশটি দেশ যেমন মর্যাদার সাথে বিশ্বের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, বাংলাদেশও তার শির উঁচু করে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ। বিদেশে আমাদের বন্ধু থাকবে, কিন্তু কোন প্রভূ আমরা মেনে নেব না। কেউ আমাদের প্রভুত্ব করতে আসলে জাতি তার সঠিক জবাব বুঝিয়ে দেবে।ডা: শফিকুর রহমান বলেন, আমরা এমন একটি জাতি চাই, যে জাতিতে পাঁচ তলা আর দশ তলার ব্যবধান থাকবে না। কারো দশ তলা থাকুক এতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু, কোন মানুষ অর্থাভাব ও দারিদ্র্যতার কারণে ফুটপাতে থাকবে তা বরদাশত করা হবে না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে প্রত্যেকটি বঞ্চিত ও দরিদ্র পরিবারের জন্য আশ্রয়ানের নিশ্চয়তা প্রদান করা। আমাদের দেশে কিছুদিন আগে সরকারি উদ্যোগে আশ্রায়ন প্রকল্প নেয়া হয়েছিল। কোন এক জায়গায় তৈরি করার আগেই ঘর ভেঙ্গে পড়েছিল। জনগণের চোখে ধুলা দিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা নেয়ার জন্যই তা করা হয়েছিল,প্রধান অতিথি বক্তৃতায় আমীরে জামায়াত ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে ২০০১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৮ জন, ২০২২ ও ২০২৪ সালের শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন,বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার বাংলাদেশকে বৃহত্তর কারাগার বানিয়ে মানুষের সব অধিকার হরন করে নিয়েছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছি।
তিনি বলেন, ইসলাম হচ্ছে আমাদের জীবনের একমাত্র আদর্শ। আমাদের ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ জীবনের অংশেই ইসলাম ছাড়া অন্য কোন আদর্শ মানা যাবে না। আর পূর্নাঙ্গ ইসলাম মানার একমাত্র ক্ষেত্র হচ্ছে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা। সেকুলার বা অন্য কোন মানব রচিত আদর্শে গড়া রাষ্ট্র ব্যবস্থায় থেকে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম মানা সম্ভব হবে না।তিনি বলেন, সেকুলারপন্থিরা অপপ্রচারের মাধ্যমে মানুষের মনে ইসলাম ফোবিয়া ঢুকিয়ে দিয়েছে। জামায়াতের কর্মীদেরকে উন্নত চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহার দিয়ে সেই ফোবিয়া দূর করতে হবে।উল্লেখ্য যে, কর্মী সম্মেলন শেষে আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী জামেয়া ইউনুছিয়া মাদরাসা পরিদর্শন ও বড় হুজুর খ্যাত আল্লামা সিরজুল ইসলামের (রাহ.) কবর জিয়ারত করেন। পরে জেলা জামায়াতের রোকন সম্মেলনে যোগ দেন।
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ দেশ বাংলা প্রতিদিন