প্রিন্ট এর তারিখঃ অগাস্ট ১৯, ২০২৫, ৮:৫০ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২৩, ২০২৪, ১০:৫৩ পি.এম
কুয়েত নেওয়ার কথা বলে ৩২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে দালাল : সাদিকুল রহমান

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ময়মনসিংহ।
ভিয়েতনামে কর্মসংস্থানে যাওয়ার পর প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন ময়মনসিংহ ফুলপুরের চক ঢাকিরকান্দা গ্রামের, আনারুল, সোলাইমান, মোহাইমিনুল, সদর উপজেলা পারানগঞ্জের আবু সাইদ, এই ৪ প্রবাসী বাংলাদেশিরা। প্রতি মাসে ৫০০ ডলারের বেশি আয়ের প্রতিশ্রুতি পেলেও দেশটিতে যাওয়ার পর কোনও কাজ পাচ্ছেন না তারা। উল্টো নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। প্রতারক চক্র অর্থপাচারে জোরপূর্বক ব্যবহার করছে তাদের। বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে দেশে ফেরার জন্য সহযোগিতা চেয়ে সরকারের কাছে আকুতি জানাচ্ছেন। ভিয়েতনামে থাকা ও ভিয়েতনাম ফেরত আসা ময়মনসিংহের ফুলপুরের আনারুল, সোলাইমান, মোহাইমিনুল, সদর উপজেলা পারানগঞ্জের আবু সাইদ, এই ৪ প্রবাসী প্রতিবেদকের কাছে এসব বর্ণনা দিয়েছেন।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ৪নং পরানগঞ্জ ইউনিয়ন বাঘাডোবা গ্রামের সাদিকুল রহমান (৩৬) ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সির দালাল তিনি, কুয়েতে উচ্চ বেতনে কাজ দেওয়ার কথা বলে প্রচারণা চালায়। ভালো প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে ৩৫০ ডলারেরও বেশি বেতনে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে আগ্রহীদের ঢাকায় এজেন্সিগুলোর অফিসে এনে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। জনপ্রতি ৮ লাখ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা নিয়ে প্রত্যেককে তাদের কুয়েত পাঠানোর নামে পর্যটক ভিসায় পাঠিয়েছেন ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ থেকে কাজের আশায় ভিয়েতনামের উদ্দেশে বিমানে ওঠার সময় প্রত্যেকের সঙ্গে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দেওয়া হয়। কেউ ডলার বহনে রাজি না হলে ফ্লাইট বাতিলের ভয় দেখানো হয়। ভিয়েতনামে পৌঁছানোর পর মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা বিমানবন্দরে তাদের গ্রহণ করে। তারপর ডলার ও পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। জানা গেছে, গত ১৬ জুলাইয়ে ৪ জন বাংলাদেশি কাজের আশায় ভিয়েতনামে গেছেন। তাদের প্রত্যেকেই কোনও না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। উচ্চ বেতনের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হলেও তাদের কাজ দেওয়া হচ্ছে না। ভিয়েতনামের হো চি মিন শহরে পাচারকারী চক্র নিজের নিয়ন্ত্রিত বাড়িতে বেশিরভাগ বাংলাদেশির জন্য থাকার ব্যবস্থা করে।
ভুক্তভোগী প্রবাসীদের অভিযোগ, উচ্চ বেতন ও ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজের কথা বলা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থায়ী কোনও কাজ পান না তারা। এক বা দুই সপ্তাহ একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করানোর পর নিয়ে যাওয়া হয় অন্যটিতে। তাছাড়া কাজ করলেও নিজের হাতে বেতন পান না। পাচারকারীদের ভাড়াবাড়িতে প্রবাসীদের আশ্রয় মিললেও থাকা-খাওয়ার খরচ বেতন থেকে কেটে নেওয়া হয়। কেউ প্রতিবাদ করলেই চলতে থাকে নির্যাতন। অনেককে নির্যাতন করে বাংলাদেশ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। গত ২১ আগস্টে ভিয়েতনাম থেকে ৪ বাংলাদেশি শূন্য হাতে দেশে ফিরে এসেছেন। তারা হলেন ময়মনসিংহ ফুলপুর উপজেলা রহিমগঞ্জ ইউনিয়নের চক ঢাকিরকান্দা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে মোঃ আনারুল ইসলাম, সোলাইমান, মোহাইমিনুল। সদরের পরানগঞ্জের আবু সাইদ। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পরানগঞ্জ ইউনিয়নের বাঘাডোবা এলাকার সাদিকুল রহমান স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে ভিয়েতনামে গিয়েছিলেন তারা। তবে ভাগ্যবদল তো হয়নি, উল্টো বিপদ নেমে এসেছে তাদের জীবনে। ধার করে ৮ লাখ টাকা দিয়ে ভিয়েতনামে যাওয়ার ৩৫ দিন পরই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ওই চার প্রবাসী যুবক। নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে যায় আনারুলের। বৃদ্ধ বাবা-মা, বউ আর এক বোনকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে বেহাল দশা তার। ঋণের টাকা ফেরত চাইতে বাড়িতে এসে বসে থাকে পাওনাদাররা। তাদের কারণে একরকম পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার পরিবার। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আগে একবার বিদেশে গিয়েছিলাম। সেখানে ধরা খেয়ে দেশে ফিরে আসি। এবার ভাবলাম কুয়েত গিয়ে ভাগ্য বদলাতে পারবো। কিন্তু ভিয়েতনাম সেখানে যাওয়ার পর দেখি ভিন্ন পরিস্থিতি, তাই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছি।’ মো. আনারুল জানান, পরানগঞ্জের সাদিকুর রহমান নামের এক দালালের ফাঁদে পড়ে অ্যাডভান্স ওভারসিসের মাধ্যমে ভিয়েতনামে গিয়েছিলেন তারা। বিএমইটি কার্ড থাকলেও তাকে পাঠানো হয় পর্যটক ভিসায়। পাচারকারীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের সঙ্গে ১ হাজার ডলার দেয় দালাল চক্র। ভিয়েতনামে পৌঁছানোর পর তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ডলার ও পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হয়। দুই ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে একটি আবাসিক হোটেলে অন্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে ছিলেন তারা। সেই টাকা দিয়ে থাকা-খাওয়ার খরচও হয়নি। এ কারণে দেশ থেকে টাকা নিতে বাধ্য হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় এলাকাবাসী দালাল সাদিকুর রহমানকে চাপ সৃষ্টি করে ৪ জনকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়।মো. আনারুলের দাবি, ভিয়েতনামে কাজ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে কোনও প্রবাসী প্রতিবাদ করলে তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন। পাচারকারী চক্রের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মো. আবু সাইদ মিয়া নামের এক বাংলাদেশি। নির্মম নির্যাতনে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।নির্মম নির্যাতনের কথা জানিয়েছেন তিনি। তার বিবরণে, ৮ লাখ টাকা দিয়ে ভিয়েতনাম যান তিনি। সেখানে ফয়েজ, শরীফ, সাইফুল ও আতিক নামের মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাকে ক্রমাগত নির্যাতন করতে থাকে। একইসঙ্গে জিম্মি করে দেশে থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করা হয়। তখন টাকার জন্য আবারও শুরু হয় নির্যাতন। তারা আমাকে মেরে মেরে দেশ থেকে টাকা নিতে বাধ্য করেছে। এখন আমি খেতে পারি না, খেলেই বমি হয়। বাঁচবো কিনা জানি না।’ভুক্তভোগী মোহাইমিনুল বলেন, মানুষের কাছ থেকে চেয়ে বা ধার করে কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। দূতাবাস জানিয়েছিলেন আমি যদি টিকিটের টাকা দেই তাহলে আমাকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হবে। আমার বিএমইটি কার্ড না থাকায় দূতাবাস কোনও সাহায্য করতে পারবে না বলে দিয়েছে। আমি বলেছিলাম, দেশে ফিরে কাজ করে টাকা শোধ করবো। আমি তো বাংলাদেশের নাগরিক, আমি কি নিজের দেশেও ফিরে যেতে পারবো না? আনারুল, সোলাইমান, মোহাইমিনুল কিংবা সদর উপজেলা পরানগঞ্জের আবু সাইদের মতো আর কোনও প্রবাসী বাংলাদেশি যেন প্রতারণার শিকার না হন সেজন্য প্রলোভন দেখানো রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।ন্যয় বিচার পাওয়ার জন্য ৪ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে দালাল সাদিকুল রহমানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী পরিবার শামসুল হক। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে দালাল সাদিকুল রহমান জানান, চার জনকে আমি বলেই ভিয়েতনাম পাঠিয়েছিলাম, তাদেরকে আমি কাজও দিয়েছিলাম কিন্তু বেতন ছিল কম। তিনি আরও জানান, আমি ফার্নিচারের কাজের কথা বলে ভিয়েতনাম পাঠিয়েছি পরবর্তীতে চারজনকে সয়ামিলে কাজ দিয়ে ছিলাম তারা ওই কাজ করিনি, পরে তারা ৩৫ দিন পর বাংলাদেশ ফিরে
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৩ দেশ বাংলা প্রতিদিন