নেত্রকোণায় গ্রাহকদের জন্য দেওয়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) বিনা মূল্যের প্রিপেইড মিটার বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায়। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় শহরজুড়ে চলছে নানা সমালোচনা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরাও।
তবে কোনকিছুকেই পাত্তা দিচ্ছেন না নেত্রকোণা পিডিবি’র প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাহমুদ এলাহী। তার দাবি- মানুষ খুশি হয়ে টাকা দিলে তো কিছু করার নাই। তবে মসজিদে মন্দিরে ১৯০টি প্রিপেইড মিটার দেওয়া হয়েছে বলে দাবিকরেন তিনি। কিন্তু প্রিপেইড মিটার সংক্রান্ত কোন তথ্য সাংবাদিকদের দেননি।
মঙ্গলবার সরেজমিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে অনেক বাসা-বাড়িতেই এসব প্রিপেইড মিটার লাগানো হয়েছে। কোন কোন বাসায় ৬-৭টি মিটার লাগাতেও দেখা গেছে। তবে কোন মিটারই ৮ হাজারের কমে কেউ নিতে পারেননি। এদিকে শহরের ৭-৮ টি মসজিদ ও বেশ কয়েকটি মন্দিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাদের এমন ধরণের কোন মিটার দেওয়ার হয়নি।
শহরের পারলা চল্লিশাকান্দা গ্রামের আব্দুস ছালাম জানান, গত মাসে বাসায় প্রিপেইড মিটার লাগিয়েছি। এতে আট হাজার টাকা লেগেছে। পিডিবি অফিসে মিটারের আবেদন জমা দিয়েছি। পরে লাইনম্যানের কাছে ৮ হাজার টাকা দেওয়ার পর বিপিডিবি’র একটি প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দিয়েছে।
কাটলী গ্রামের বঙ্গবন্ধু মোড় এলাকার মাহবুব মিয়া জানান, আমার দুই দোকানে দুইটা প্রিপেইড মিটার লাগিয়েছি। একটা সাড়ে নয় হাজার ও অপরটি সাড়ে আট হাজার টাকায়। আবেদন করার পর অফিসের লাইনম্যানকে টাকা দিয়েছি তারাই সরকারি মিটার লাগিয়ে দিয়েছে। এসব যে বিনামূল্যে তা জানা ছিল না আমার।
একই এলাকার কাজল মিয়া জানান, আমাদের আশেপাশে অনেকেই প্রিপেইড মিটার লাগাচ্ছে। অফিসের লোকজনকে টাকা দিলেই এসব মিটার দেয়। যার কাছ থেকে যেমন পারে নিচ্ছে। কারো কাছ থেকে ৮ হাজার, কারো কাছ থেকে ৯ হাজার আবার কারো কাছ থেকে ১০ হাজারও নিচ্ছে। এই অফিসটা লুটপাটের একটা জায়গা। সাধারণ মানুষ তাদের হাতে জিম্মি।
জয়নগর গ্রামের খোকন খান জানান, সাড়ে আট হাজার টাকায় অফিস থেকে মিটার লাগিয়েছি। তবে মিটার যে বিনামূল্যে তা জানা ছিল না। বিনামূল্যের মিটার আমাদের কিনতে হয়েছে উচ্চ মূল্যে। আবার প্রতিমাসে চার্জও কাটা হবে। তাদের কাছে কতটা অসহায় আমরা।
নেত্রকোনা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত বছরের শেষের দিকে এসব মিটার আমাদের অফিসে আসে। দুই দফায় এ পর্যন্ত এক হাজার মিটার অফিসে এসেছে। এরমধ্যে ৬৫০টি মিটার বিতরণ হয়েছে। মিটার প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার নেওয়া হচ্ছে। আমারা কর্মীরাই সেই টাকা নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীকে দিচ্ছি। যদিও নিয়মানুযায়ী এসব প্রিপেইড মিটার মসজিদ-মন্দির ও গরীব মানুষকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়ার কথা। কিন্তু ৮-১০ হাজারে বিক্রিকরা হচ্ছে ধনীদের কাছে।
শহরের নাগড়া শিব মন্দিরের দায়িত্বে থাকা লিটন কুমার ঠাকুর বলেন, আমরা কোন প্রিপেইড মিটার পাইনি। এমনকি আমার জানা মতে আশপাশের কোন মন্দিরে এসব মিটার এখনো দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে নেত্রকোণা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়ে গেলে প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান মাহমুদ এলাহী প্রথমে মিটার বাবদ টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এসব মিটার বিনামূল্যে দেওয়া হয়। প্রতিমাসে গ্রাহককে এর জন্য ৪০ টাকা চার্জ দিতে হবে। পরে টাকা নেওয়ার তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করলে বলেন, কেউ খুশি হয়ে টাকা দিলে তো কিছু করার থাকে না। তবে এই পর্যায়ে কতগুলো প্রিপেইড মিটার গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি একেক সময় একেক তথ্য জানান। সঠিক তথ্য লিখিত আকারে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও দুই ঘণ্টা সময় ক্ষেপন করে অবশেষে তথ্য দেন।