দারিদ্র্য আর নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে নিত্য লড়াই যেন নিয়তি! তারপরেও লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছে প্রকাশটা বুঝি অযৌক্তিক! তবুও সে দমেনি। হার মানেনি দারিদ্র্যের কাছে।
নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করেও জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে সে। মূল লক্ষ্য— যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিষ্ঠুরতম দারিদ্র্যকে দূর করে পরিবারের দুঃখী মায়ের মুখে হাসি ফোটানো। সে অনুযায়ী জীবনযুদ্ধে নেমে শত বাঁধা পেরিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় লাকি আক্তার দেখিয়েছে বিশেষ কৃতিত্ব।
সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে একমাত্র জিপিএ-৫ প্রাপ্তি শিক্ষার্থী সে।
শতপ্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার পড়ালেখায় ছেদ পড়েনি। তার স্বপ্ন বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। কিন্তু চরম দারিদ্র্য তার সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বিশাল বাঁধা। এ বাঁধা ডিঙিয়ে সেই স্বপ্নপূরণ হবে কিনা সে চিন্তাই এখন সারাক্ষণ লাকি আক্তারের।
মেধাবী লাকি আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে চায়। কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে লাকি আক্তারের!
লাকি আক্তার বলেন, "টাকার অভাবে প্রাইমারি পাস করার পরেই আম্মা লেখাপড়া বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল। তখন আমাদের গ্রামের আতাউর ভাই আমাকে মধ্যনগর স্কুলে ভর্তি করেন।৬ষ্ট-১০ম শ্রেণি পর্যন্ত তিনিই আমাকে সব বই দিয়েছেন এবং উনার কোচিং-এ আমাকে কোন বেতন ছাড়াই পড়িয়েছেন।অনেকেই বিভিন্ন সময় ফরম ফিলাপের টাকা ও শিক্ষার উপকরণ দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছেন।মানুষের সহযোগিতা ছাড়া আমি এ পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারতাম না।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা আমার কিন্তু আমার কাছে এইচএসসির বই ছাড়া অন্য কোন বই বা সাজেশন নাই।টাকার অভাবে কোচিং করতে পারছি না।জানিনা আল্লাহ কপালে কি রাখছেন!"
লাকি আক্তারের মা ফুলতারা বেগম বলেন -"লাকির বাপ মইরে যাওনের হরে আমি মাইনষের বাড়ি কাজ করছি,কাথা সিলাইছি,মেয়েরে পড়াইতে অনেক কষ্ট করছি।এহন আমার সইলো শক্তি নাই, কাজও করতাম হারি না।বাড়িতে ঘরও নাই এইজন্য লাকিরে নিয়া আমার ভাইয়ানের (ভাইদের) কাছে থাহি,তারে হড়ানির ইচ্ছা থাকলেও আমার ক্ষেমতা নাই।"
মধ্যনগর বিশ্বেশ্বরী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ইংরেজি প্রভাষক পূর্ণিমা চৌধুরী বলেন- "লাকি আক্তার দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। অভাব অনটনের সংসারে অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করেও ভালো ফল করেছে। এরকম একজন মেধাবী ছাত্রের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদানের জন্যে আমি আমার সাধ্যের সবটুকু করবো।পাশাপাশি, লাকি আক্তারের মতো সংগ্রামী,মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্যে সমাজের সচেতন মানুষজনের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।