নওগাঁয় স্বাধীন বাবু (৮) নামের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থীর বিষ পানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
তার পিতা সহ স্বজনের দাবি
নিহত শিশু শিক্ষার্থী স্বাধীন বাবু খেলা-ধুলার মাঝে বাড়িতে (ঘড়ে) থাকা বিষপান করেছেন, তবে কেউ বিষপান করতে দেখেন নি, বিকেল সারে ৩ টারদিকে বমি করার পর বিষের গন্ধ পেয়ে পরিবারের লোকজন বিষ খাওয়ার বিষয় জানতে পারেন এবং সন্ধারদিকে তাকে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়ার পরই সেখানে তার মৃত্যু হয়। এরপর মৃতদেহ বাড়িতে আনা হয় বলেই জানিয়েছেন স্বজনরা।
বিষপানে শিশু মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌছে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট অন্তে ঘটনাস্থল থেকে শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে স্বজনদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করেন থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ।
মর্মান্তিক এ শিশু মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার পাতনা (মৎস্যজীবি পাড়া) গ্রামে। নিহত শিশু স্বাধীন বাবু ঐ গ্রামের লোকমান হোসেন এর ৩য়' স্ত্রীর পক্ষের ছেলে এবং পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলা সদর উপজেলার লারচি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী।
শিশু স্বাধীন বাবু নিজেই বিষপান করেছে, নাকি তাকে বিষপান করানো হয়েছে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জনমনে।
স্থানীয় সূত্রে জানায়, নিহত শিশু শিক্ষার্থী স্বাধীন বাবু'র মা শারমিন আক্তার প্রায় ৮/৯ মাস আগে স্বামী ও সন্তান স্বাধীনকে রেখে নিরুদ্দেশ হোন, এমনকি শিশু স্বাধীন বাবুর মা শারমিন আক্তার কোথায় আছেন-কেমন আছেন সেটাও তার স্বামী, স্বজন বা গ্রামের লোকজন ও জানেন না, গৃহবধূ শারমিন আক্তার নিখোজ এর ঘটনায় সে সময় থানায় কোন মিছিং ডায়েরী বা জিডিও করেন নি পরিবার এর পক্ষ থেকে। মা-শারমিন আক্তার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে স্বাধীন বাবু তার বাবার কাছেই থাকতেন। ঘটনার দিন সকালে নিহতের বাবা লোকমান হোসেন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মাঠে যান এবং বিকেল ৩ টারদিকে বাড়িতে আসেন এরকিছু পরই আবারও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান তিনি। বাবা লোকমান হোসেন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার অল্প-সময়ের ব্যবধানে শিশু স্বাধীন বাবু ছটফট ও বমি করতে থাকলে বিষ পানের বিষয়টি ঘটনাটি জানতে পারেন প্রতিবেশী সহ পিতার বাড়ির স্বজনরা। কিন্তু শিশু স্বাধীন বাবুকে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয় সন্ধারদিকে। নওগাঁ সদর হাসপাতালে পৌছার কিছু পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শিশু স্বাধীন বাবু। মৃত্যুর পরই হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ বাড়িতে আনেন স্বজনরা।
এব্যাপারে নিহত শিশুর বাবা লোকমান হোসেন বলেন, আমি সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মাঠে যাই। বিকেল ৩ টারদিকে বাড়িতে এসে টিউবওয়েলে মুখচোখ ধুয়ে হাট চকগৌড়ীতে যাওয়ার ১০/১৫ মিনিট পরই মোবাইলে ঘটনার খবর পাই যে ছেলে স্বানীন বাবু বিষ জাতীয় কি যেন খেয়েছে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।
স্থানিয়রা জানান, নিহত শিশুর বাবা লোকমান হোসেন মোট ৩ টি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর এক সন্তান রয়েছে, লোকমান কে ছেরেদিয়ে সন্তান নিয়ে চলে যায় প্রথম স্ত্রী। পরে লোকমান দ্বিতীয় বিয়ে করেন, কিন্তু সেই স্ত্রীও লোকমান কে তালাক দিয়ে অনত্র বিয়ে করে সংসার করছেন। সর্বশেষ লোকমান ভান্ডারপুর গ্রামের শারমিন আক্তারকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন এবং বিয়ের ২/৩ বছর পরই তাদের সংসারে সন্তান স্বাধীন এর জন্ম হয়। তাদের সংসারে ঝামেলা লেগেই থাকত। তারপরও ১১ বা ১২ বছরের মতো সংসার করার পর হঠাৎ করেই স্বামী লোকমান ও সন্তান স্বাধীন বাবুকে রেখে স্বামীর বাড়ি থেকে অজানার উদ্দেশ্যে চলে যান শারমিন আক্তার। যাওয়ার পর থেকে আর ফিরে আসেন নি, বা স্বামীকে তালাকও দেন নি। মা শারমিন আক্তার যাওয়ার পর থেকেই শিশু স্বাধীন বাবু তার বাবা লোকমান এর কাছেই থাকেন বলেও জানান স্থানিয়রা। হঠাৎ করেই শিশু স্বাধীন বাবু'র এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এমন কি শিশু স্বাধীন বাবু বিষপান করেছে.?, নাকি তাকে কোন খাবারের সাথে বিষপান করানো হয়েছে এমন সব কথাও বলাবলি করছিলো ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকেই। ঘটনাটি তদন্ত পূর্বক পর্কৃত ঘটনা উদর্ঘাটনে প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।
শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার এর সত্যতা নিশ্চিত করে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন জানান, শিশু মৃত্যুর ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে প্রাথমিক সুরত হাল রিপোর্ট অন্তে মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক শুক্রবার নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং এঘটনায় থানায় ইউডি মামলা হয়েছে। ময়না তদন্তের রির্পোট আসার পর মৃত্যুর কারন জানা যাবে বলেও জানান তিনি।