এখন লিচুর ভরা মৌসুম হওয়ায় চাষিরা যেন এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে স্বাদ-রস আর মিষ্টিতে এগিয়ে আছে মাদ্রাজি, চায়না আর মোম্বাই জাতের লিচু। রসালো, মিষ্টি ও স্বাধে অতুলনীয় হওয়ায় এখানকার লিচু জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর কদর বাড়ছে। এখান থেকে লিচু কিনে ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছেন।
এ উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রামের শতাধিক চাষি লিচুচাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতি উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। এরই মধ্যে স্থানীয় বাজারে আগাম লিচু বিকিকিনি শুরু হয়েছে। এতে যোগ দিচ্ছেন স্থানীয় চাষি, ব্যবসায়ী ও পাইকাররা। আবহাওয়ার কারণে এ মৌসুমে লিচুর ফলন কিছুটা কম হলেও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা খুবই খুশি। খুচরায় প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে আখাউড়া উত্তর আখাউড়া সদর দক্ষিণ ও মনিয়ন্দ ইউনিয়নে অন্তত ৩০টি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এখানকার এমন কোনো বাড়ি নেই যার আঙিনায় ৮-১০টি লিচুগাছ নেই। গাছে গাছে লাল লিচুতে রঙিন হয়ে আছে পুরো এলাকা। গ্রামজুড়ে এখন গাছ ভর্তি লিচু আর লিচু। থোকায় থোকায় বাহারি লিচুতে যেন সবার মন কাড়ছে। সেই সঙ্গে লিচুর মৌ মৌ গন্ধ আর ছোট পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে এলাকা এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর এলাকার দূর্গাপুর, উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের রামধননগর, চানপুর, আমোদাবাদ, রাজাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের চাষিরা লিচু নিয়ে এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাছাড়া বাদুড় ও কাকের উপদ্রব থেকে বাঁচাতে তারা গাছের চূড়ায় বৈদ্যুতিক বাতি, পলিথিন, কাগজ, টিনের তৈরি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র লাগিয়ে বাগান পাহারা দিয়ে আসছেন।
এদিকে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন সড়ক পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জ, ভৈরব, নরসিংদী, কসবা, কুমিল্লা, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা নিয়ে লিচু বিক্রি করছেন। লিচু চাষে কম শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় ধানী জমিগুলো লিচু বাগানে রুপান্তরিত হচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক লিচুচাষি জানান, এ মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় লিচুর ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার লিচুর ফলন কম হলেও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
উপজেলার আজমপুর এলাকার মো. সোহাগ মিয়া বলেন, আমার ২টি বাগানে ৬৫টি লিচু গাছ আছে। তবে এ বছর আবহাওয়াজনিত কারণে তুলনামূলক লিচু ফলন কম এসেছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে লিচু বিক্রি করছি। তবে ফলন কম হলেও বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
লিচুচাষি মো. শফিক মিয়া বলেন, বাড়ি সংলগ্ন অন্যান্য ফল গাছের পাশাপাশি আমার প্রায় ৭০টি লিচু গাছ রয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে ফলন ভালো রাখতে মেশিনের সাহায্যে পানি দিয়েছে। গত তিনদিন ধরে চলছে বেচাকেনা। এ পযর্ন্ত ১০ হাজার টাকা লিচু বিক্রি করেছি। গত বছর এ বাগান থেকে ১ লাখ টাকার উপর লিচু বিক্রি হয়েছে। এবার ফলন কিছুটা কম হলেও দাম ভালো থাকায় বেশি আয় হবে বলে আশা করছি।
লিচু কিনতে আসা মো. মিনহাজ মিয়া বলেন, আমরা কয়েকজন বন্ধু চানপুর এলাকার একটি লিচু বাগান দেখতে গিছে। রসালো মিষ্টি ফল দেখে বাড়ির জন্য ৩০০ লিচু কিনেছি। এখানকার লিচু খুবই ভালো। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও খুব সুস্বাদু।
পাইকার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমি মৌসুমি লিচু বিক্রি করে আসছি । এখানকার লিচু মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় এ মৌসুমে ৩টি বাগান ইজারা নিয়েছি। স্থানীয় বাজারে লিচুর যে চাহিদা রয়েছে। বিক্রিতে ভালো দাম পেলে এবার বেশি লাভবান হওয়ার আশা করছি।
লিচুগাছ মালিক আলাউদ্দিন বলেন, আমার ৩টি লিচু বাগান রয়েছে। লিচু হচ্ছে আমার প্রধান ফসল। এর আয় থেকেই পরিবারের ভরণ-পোষণসহ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চালাই। এবার লিচু থেকে কম করে হলেও ৭০-৮০ হাজার টাকা আয় হবে বলে আশা করছি।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম জানান, এ উপজেলায় প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ আবহাওয়ার কারণে লিচুর কিছু ক্ষতি হলে ও শেষ পযর্ন্ত ফলন ফলন ভালো হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, এ মৌসুমে প্রায় ১ কোটি টাকার উপর লিচু বিক্রি হবে। তাছাড়া ফলন ভালো রাখতে সার্বিকভাবে চাষিদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।