ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলায় দিনদিন জনপ্রিয় হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব ও সাশ্রয়ী ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। এতে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের প্রবণতা যেমন কমছে, সেই সঙ্গে সাশ্রয় হচ্ছে ফসলের উৎপাদন খরচ। তেমনিভাবে আবাদকৃত জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসল উৎপাদন বাড়ছে কয়েকগুণ।
এদিকে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সারের উৎপাদন করে ভালো টাকা আয় করছে অনেক উদ্যোক্তা। এর মধ্যে এক সফল উদ্যোক্তা হলেন উপজেলার দক্ষিণ ইউনয়নের নুরপুর গ্রামের কৃষক মো. আব্দুল হাসেম মিয়া। তিনি বাড়ির আঙিনায় ছায়াযুক্ত জমিতে কেঁচো সার তৈরি করে এলাকায় বেশ সফলতা অর্জন করেছেন।
আবুল হাসেম ঐ গ্রামের মৃত রজব আলীর ছেলে। তার পরিবারে স্ত্রী, ৩ ছেলে ১ মেয়ে রয়েছে। পরিবেশ বান্ধব ও সাশ্রয়ী কেঁচো সার উৎপাদন করে প্রতিমাসে তিনি ৩-৪ হাজার টাকার উপর আয় করছেন। এ কাজ ছাড়া তিনি মৌসুম অনুযায়ী নানা প্রকারের সবজি, ফল ও ধান চাষ করছেন। এতে করেই চলছে তার সংসার। অন্যদিকে, কৃষিবিভাগ জৈব সারের ব্যবহার ও উৎপাদন ছড়িয়ে দিতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন।
আবুল হাসেম জানান, আজ থেকে ৭ বছর আগে উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক সরকারি প্রশিক্ষণ নিয়ে তার বাড়িতে প্রাথমিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করার কাজ শুরু করেন। প্রথমে ৩টি রিং স্থাপনের মধ্যে মাটি প্রস্তুত, ইটের বেড়া, গোবর, কলাগাছ কচুরিপনা, সবজির খোসা এবং পাটের পরিত্যাক্ত ছালা দিয়ে বেড় তৈরি করেন। এই বেড় তৈরি করতে তার প্রায় দেড় হাজার টাকার খরচ হয়। সরকারি সহায়তা হিসেবে তাকে রিং, নগদ টাকা, টিন, নেটজাল ও কেঁচো দেওয়া হয়। মাত্র ৪৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর বেড় থেকে প্রথম অবস্থায় ৩ মণ কেঁচো সার পান তিনি। প্রতি কেজি বিক্রি করেন ২০ টাকা করে। এরপর তার উৎসাহ কয়েকগুন বেড়ে যায়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কেঁচো সার উৎপাদন করে আসছেন।
তিনি আরো জানান, বেকার লোকজন বাড়িতে অলস সময় পার না করে কৃষি অফিসের পরামর্শে এই সার উৎপাদন করলে তারাও মাস শেষে ভালো টাকা আয় করতে পারবে। অবদান রাখতে পারবে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায়। ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে যেহেতু ভালো টাকা আয় হয় তাই তিনি এটাকে বড় আকারের করার পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানান।
একাধিক কৃষক জানান, দীর্ঘ বছর ধরে সবজি, ফল ও ধান আবাদ করতে নানা রকমের কীটনাশক সার ব্যবহার করতেন। কীটনাশক ছাড়া যেন কোনো প্রকার ফসল চাষ তারা চিন্তা করতে পারতেন না। তাছাড়া অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলা নিয়ে তারা রীতিমতো দুশ্চিন্তায় থাকতেন। তবে বর্তমানে কৃষি অফিসের পরামর্শে নানা রকম জৈব সার ব্যবহারে সেই চিত্র অনেকটাই যেন পাল্টে গেছে। জৈব সারে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এখন সেই দিকে ঝুঁকছেন।
কৃষক মো. জুয়েল মিয়া জানান, এক সময় তিনি জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করতেন। কৃষি অফিসের লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে গত ২ বছর ধরে সবজি আবাদে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট সার ক্রয় করে নিয়ে যান। এতে তার উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কমে গেছে। পাশাপাশি রোগবালাইও নেই ফলন ভালো হচ্ছে। এখন ফসল উৎপাদনে এই সারই তার ভরসা।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, আবুল হাসেমের তৈরি এই জৈব সার উপজেলা ভালো সাড়া ফেলেছে। এছাড়া জৈব সার উৎপাদনে নতুন উদ্যোক্তাদেরকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তারা কৃষকদেরকে এ জৈব সার ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি করছে।