শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন,নওগা প্রতিনিধি
আমের রাজ্য নওগাঁয় এখন সু-মিষ্ট আম্রপালী আম ক্রয় ও বিক্রয় শুরু হয়েছে। সু-মিষ্ট বা সু-স্বাদু আম্রপালী আম ক্রয়-বিক্রয়ে মানুষের ঢল নেমেছে নওগাঁর সাপাহার আমের হাটে। সরকারী ভাবে ঘোষনা অনুযায়ী আম্রপালী আম বাজারজাত করণের আরো কয়েক দিন বাঁকি থাকলেও প্রচন্ড গরমে গাছগুলোতে ইতি মধ্যেই আম পাকতে শুরু করায় আমের রাজ্য নওগাঁর সাপাহার আম বাজার ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠেছে আম বাজার।
উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সর্ববৃহত আমের হাট এখন বসে নওগাঁর সাপাহার উপজেলায়। দেশের বিভিন্ন জেলা ও স্থান থেকে ব্যাবসায়ীগন অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও এসেছেন পাইকারি আম কিনতে নওগাঁর সাপাহারে। নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকা সাপাহার উপজেলার আম সু-মিষ্ট হওয়ায় দেশের সর্বত্রই এই আমের চাহিদা ও রয়েছে ব্যাপক। প্রতিদিন হতে ভ্যান, টলি পিকআপ সহ নানা ভাবে আসা আমে ভরে যায় এ আমের হাট। একই সাথে চলে জমজমাট ভাবে কেনা-বেচা। নওগাঁ জেলার সাপাহার সদর এর জিরো পয়েন্ট থেকে পার্শ্ববর্তী পত্নীতলা উপজেলার দিবরের মোড় পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ হয় এই আমের হাট। তবে এই বছর লম্বা খরা ও তীব্র তাপদাহের কারনে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বিভিন্ন জাতের আমের সাথে আম্রপালী আমও বাজারে উঠতে শুরু করেছে। এবার সাপাহার সদরে প্রায় ২শ' ৫০টি আম আড়তে আমের বেচা-কেনা হচ্ছে বলে আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শ্রী কার্তিক সাহা জানিয়েছেন। প্রতিদিন এসব আড়ৎগুলো থেকে ৫ থেকে ৮ হাজার মন আম ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলা বা স্থানে। জুন মাসের ২২ তারিখের পর এই বেচা কেনার পরিমাণ আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করেছেন এখনকার আম ব্যাবসায়ী ও ক্রেতাগন।
এছাড়াও উপজেলার খঞ্জনপুর মোড় ফুরকুটির মোড়, উচাডাঙ্গা মোড়, নিশ্চিন্তপুর মোড়, হরিপুর মোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় আরোও প্রায় ৩শ' ৫০টি আড়ৎ ঘরে আমের বেচা-কেনা চলছে। যার ফলে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এ আম বাজারে ও আম বাগানে।
সরেজমিনে আম বাজারে গিয়ে আম বিক্রেতা আব্দুর রহিম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এবার কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি সহ অন্য সকল কিছুর খরচের বৃদ্ধির কারনে খরচ বাড়লেও বাজারে আমের দাম অনেকটা তুলনা মূলক কম।
৪০ কেজিতে এক মন ওজন হলেও আমের ওজনের ক্ষেত্রে আম আড়ৎদারগন আম চাষীদের জিম্মি করে ৫০/৫৩ কেজিতে ১ মন হিসেবে মাপ নিচ্ছেন।
সঠিক নিয়মে নির্ধারিত ওজনে আম কেনা বেচার জন্য আম চাষীরা বাজার মনিটরিং কমিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সাপাহার বাজার আম চাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জানান, আমের ওজনের বিষয়ে কিছু বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে, দ্রুতই বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা করা হবে এবং প্রশাসনিক ভাবে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী এবার গুটি (স্থানীয়) আম ২২ মে পাড়া শুরু হয়।
এরপর পর্যায়ক্রমে গোপালভোগ ২৮ মে, খিরসাপাত/হিমসাগর ২ জুন, নাগফজলি ৭ জুন, ল্যাংড়া/হাঁড়িভাঙা ১০ জুন, ফজলি ২০ জুন, আম্রপালি ২২ জুন এবং আশ্বিনা/বারি-৪/গৌড়মতি/কাটিমন ১০ জুলাই। আর এই সময়ের মধ্যে বাগান থেকে আম সংগ্রহ করবেন আম চাষীরা।
সাপাহার সদর আম হাট ঘুরে দেখা গেছে বর্তমানে ল্যাংড়া আম ১১শ' থেকে ১৩শ' প্রতি মন, নাগফজলি ১৭শ' থেকে ২ হাজার প্রতি মন, খিরসাপাত ২হাজার থেকে ২৫শ' টাকা প্রতি মন এবং আম্রপালি ১৮শ' থেকে ২৭শ' টাকা প্রতি মন প্রকার ভেদে ক্রয় ও বিক্রয় হচ্ছে।
সাপাহার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী উপজেলায় এ বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় ১৫ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সাপাহার বাজার আম ব্যাবসায়ী সমিতির তথ্যানুযায়ী প্রতিদিনই সাপাহার বাজারে কয়েক কোটি টাকার আম ক্রয় ও বিক্রয় হচ্ছে।