বাংলাদেশে এবারের ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ প্রার্থী প্রার্থী কোটিপতি আওয়ামী লীগের ২৬৫ প্রার্থীর বছরে গড় আয় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ঘরে মোট সম্পদ মূল্য সাড়ে ২৮ কোটি টাকার বেশি দলটির ১৭০ জনই পেশায় ব্যবসায়ী
এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পেয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক[ সংগঠনটি]
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ১ হাজার ৯৪৫ জনের মোট বার্ষিক আয় ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। মোট সম্পদমূল্য ১৩ হাজার ৬২০ কোটি টাকা
সবচেয়ে বেশি আয় ও সম্পদ আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ]
এরপর, আয় ও সম্পদ বেশি[ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ]
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের গড় আয়ের সঙ্গে অন্য সব প্রার্থীর গড় আয়ের বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে,
২০০৮ সাল থেকে দেখা যাচ্ছে, যে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ছিল, সেখানে প্রার্থীদের মধ্যে আয় বৈষম্য কম ছিল। একতরফা নির্বাচনে এ বৈষম্য বেড়ে যায়। কারণ, এসব নির্বাচনে যেকোনো প্রার্থী দিলে জিততে সমস্যা হয় না।সুজন সম্পাদক আরও বলেন, ২০১৪ সালে আয় বৈষম্যের প্রবণতা প্রকট হতে শুরু করে। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের গড় আয় বাড়লেও অন্য সব প্রার্থীর সঙ্গে তাদের প্রার্থীদের আয়ের এ বৈষম্য কিছুটা কমে আসে। তখন দুই গ্রুপের মধ্যে পার্থক্য ছিল ৬১ শতাংশ। ২০২৪ সালের নির্বাচনের হলফনামা অনুসারে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের আয়ের পরিমাণ বেড়ে এবং অন্য সকল প্রার্থীর সাথে পার্থক্য অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৪ সালে এ পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫৯ শতাংশে।
সুজনের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় , ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থী ছিলেন প্রায় ৫২ শতাংশ ।তা ৭ শতাংশ বেড়ে এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবসায়ী প্রার্থী প্রায় ৫৯ শতাংশ।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৬৫ প্রার্থীর মধ্যে ১৭০ জন [৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ ], জাতীয় পার্টির ২৬২ প্রার্থীর মধ্যে ১৭৩ জন [ ৬৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ ] এবং ৪৩৩ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে ব্যবসায়ী ৩০২ জন [ ৬৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ ]
নামে বেনামে সব সম্পদ মিলিয়ে এবারের নির্বাচনে শত কোটি টাকার অধিক সম্পদশালী প্রার্থী আছেন ২৭ জন।এদের মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী ব্যক্তি হলেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী ] তার সম্পদমূল্য ১৪৫৭ কোটি টাকা।প্রতিবেদনের সর্বশেষ শত কোটির সম্পদশালী প্রার্থী হলেন ঢাকা-৯ আসনের আওয়ামী প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী।[ তার সম্পদমূল্য ১০৩ কোটি টাকা] অন্যান্যরা হলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এ কে একরামুজ্জামান তার সম্পদ হলো [ ৪৯৭ কোটি ], কুমিল্লা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন [৩৭২ কোটিঢা ]কা-১ আসনের আওয়ামী প্রার্থী সালমান ফজলুর রহমান [৩৫৩ কোটি ] সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামী প্রার্থী আবদুল মমিন মণ্ডল [৩৪২ কোটি ] গাজীপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদ [৩৩০ কোটি ] চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিলীপ কুমার আগর ওয়ালা [৩১৭ কোটি ] কুমিল্লা-৩ আসনের আওয়ামী প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন [৩০৫ কোটি ] নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মূর্তজা (২৭৭ কোটি), ঢাকা-৬ আসনের আওয়ামী প্রার্থী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন [ ২৩৭ কোটি ] নরসিংদী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা [১৯২ কোটি ]
অন্যদিকে সুজনের প্রতিবেদনে সবচেয়ে দশ ঋণগ্রস্ত প্রার্থীর তালিকাও করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক [ সুজন ]
বেশি ঋণ আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এ কে একরামুজ্জামান। তার ঋণের পরিমাণ ২৩০১ কোটি টাকা।শীর্ষ ঋণগ্রস্তের তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন চট্টগ্রাম-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম [১৯৯৭ কোটি ]
বাকি অন্যরা হলেন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ রাজ্জাক খান। তার ঋণের পরিমাণ ৫০৬ কোটি টাকা
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী [৯৩৫ কোটি ]
গাইবান্ধা-৫ আসনের আওয়ামী প্রার্থী মাহমুদ হাসান [১২০৩ কোটি ]
কুমিল্লা-৬ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এয়ার আহমেদ সেলিম [৮৪৫ কোটি ] যশোর-৩ আসনের আওয়ামী প্রার্থী কাজী নাবিল আহমেদ [ ৯১৯ কোটি ] ফেনী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইশতিয়াক আহমেদ সৈকত [ ৫৫৫ কোটি ] জয়পুরহাট-২ আসনের আওয়ামী প্রার্থী আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন [৭৫৭ কোট ] নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ কে এম সেলিম ওসমান [৫১০ কোটি ]
প্রতিবেদনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন ] জানায়,কোটি টাকার অধিক আয়কারী প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি। দলটির ৯৮ প্রার্থীর [ ৪৫.০৩%] বার্ষিক আয় কোটি টাকার ওপরে। এরপর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ৫৬ জন প্রার্থী [১২.৯৩% ]এবং জাতীয় পার্টির ১০ জনের [৩.৮২%] বার্ষিক আয় কোটির টাকার ওপরে।
উপার্জনকারীর তালিকায়ও এগিয়ে আছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের গোলাম দস্তগীর গাজী। তার বার্ষিক আয় ৮৩ কোটি টাকা।
বাকি অন্যরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের আওয়ামী প্রার্থী এস এ কে একরামুজ্জামান [৫৪ কোটি ] কুমিল্লা-৮ আসনের আওয়ামী প্রার্থী আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন [ ৭০ কোটি ] ঢাকা-১ এর সালমান এফ রহমান [৫০ কোটি ] নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী গোলাম মূর্তজা [ ৫১ কোটি ] বরিশাল-৩ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু [১৮ কোটি ] ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী [ ১৯ কোটি ] নরসিংদী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম মোল্লা [১৬ কোটি ] যশোর-৩ আসনের আওয়ামী প্রার্থী কাজী নাবিল আহামেদ [১৪ কোটি ] ঢাকা-১৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরী [১৬ কোটি ]
নগদ টাকার পরিমাণের শীর্ষ দশ প্রার্থীর তালিকা করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক [ সুজন ] সবচেয়ে বেশি পরিমাণ নগদ অর্থ আছে [ সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের আওয়ামী প্রার্থী আবদুল মমিন মণ্ডলের নগদ টাকার পরিমাণ ৪৭ কোটি ] নোয়াখালী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূইয়া [ ২৬ কোটি ]
টুয়াখালী-১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (২৬ কোটি), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এ কে একরামুজ্জামান [ ২৩ কোটি ] কুমিল্লা-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মজিদ [ ২৩ কোটি ] চট্টগ্রাম-১০ আসনের তৃণমূল বিএনপির ফেরদাউস বশির (১৯ কোটি), রাজশাহী-৬ আসনের আওয়ামী প্রার্থী শাহরিয়ার আলম [২১ কোটি ] ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী প্রার্থী সোলায়মান সেলিম [১১ কোটি ] কুমিল্লা-৩ আসনের ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন [১৬ কোটি ] মানিকগঞ্জ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ [ ১১ কোটি ]
সুজনের সংবাদ সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন .বলেন, জনগণ এখন সংসদ থেকে কিছু আশা করে না। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তো জিতেই গেল। তবে এই নির্বাচন কেউ মেনে নেবে না। টানেলের শেষে নিশ্চয়ই আলো আসবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ভালো নির্বাচন হবে, আরও বক্তব্য দেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক নি বলেন, প্রার্থীদের সম্পদের তথ্যের ক্ষেত্রে দুদক চাইলে দুদক আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী যে কোনো ব্যক্তির ১৫ বছরের সম্পদের হিসাব চাইতে পারে।অন্যদিকে প্রার্থীদের হলফনামায় অস্বচ্ছতার কথা উল্লেখ করে কয়েকটি সুপারিশও করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক
ফলাফলের গেজেট প্রকাশের আগেই নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হলফনামায় উল্লিখিত তথ্যসমূহের সঠিকতা যাচাই করে মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের ফলাফল বাতিল করা।
উৎস: বাংলাদেশ প্রতিদিন