রিপন কান্তি গুণ, সিনিয়র জেলা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা
দেশের বিভিন্ন এলাকার মতো নেত্রকোনাতেও চাষ হচ্ছে রঙিন ফুলকপি। পুষ্টিগুণ সাধারণ ফুলকপির চেয়ে বেশি। কপি গুলো দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন সুস্বাদু। এসব কপির ফলন ও মুনাফা ভালো হওয়ায় চাষীদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে। এসব রঙিন ফুলকপি ক্রেতাদের নজর কাড়ছে, চাষীরাও ভাল দাম পাচ্ছেন।
সরেজমিনে নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, রঙিন ফুলকপি চাষ করে অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন। মাঠজুড়ে বাহারী ফুলকপি। কোথাও বেগুনী, কোথাওবা হলুদ। না না রঙের এইসব ফুলকপি দেখতে খুবই সুন্দর।
জেলার সদরের তাঁতিয়র গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এতদিন আমি সাদা ফুলকপি চাষ করেছি। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী গতবছর থেকে অল্প কিছু জায়গায় এই রঙিন ফুলকপি চাষ করেছিলাম। ফলনও হয়েছিল ভালো, মূল্যও ভালো পেয়েছি। উৎপাদন খরচও একই। তবে কপি গুলো রঙিন হওয়ায় বাজারে এই ফুলকপির দাম দ্বিগুণ। গতবার জেলা কৃষি অফিস থেকে ৫০০ বীজ এনে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে ৪ শতাংশ জমিতে রোপণ করে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছি। এবার আমি ১০ শতাংশ জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করেছি।
তিনি জানান, ফুলকপি চাষে তিনি কোনো প্রকার কীটনাশক বা সার ব্যবহার করেননি, শুধু জৈব সার ব্যবহার করছেন। একই পরিমাণ খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এই কপি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও।
বারহাট্টা উপজেলা সদরের বরঘর গ্রামের কৃষক তপন চৌধুরী বলেন, ‘নিজ বাড়ির আঙিনার এক বিঘা জমিতে আমি প্রতি বছরই নানা ধরনের সবজি চাষ করি। এবার স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে জমির অর্ধেকাংশে পরীক্ষামূলকভাবে হলুদ ও গোলাপি রঙের ফুলকপি চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। এলাকার মানুষ আগ্রহী হয়ে ভালো দাম দিয়ে খেত থেকেই এই ফুলকপি কিনে নিচ্ছেন। বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে এসব রঙিন ফুলকপি। মাঝারি আকৃতির একেকটি ফুলকপি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন কৃষকসহ উৎসুক মানুষ। তাদের কেউ ফুলকপি কিনছেন আবার কেউ চাষের বিষয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন।
মোহনগঞ্জ উপজেলার কৃষক মশিউর রহমান জানান, এবার তিনি ৩০ শতক জমিতে হলুদ ও বেগুনি রঙের ফুল কপি চাষ করেছেন। কপিগুলো ভিন্ন রঙের হওয়ায় সহজেই ক্রেতাদের নজর কেড়েছে এই ফুলকপি। দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সূত্র জানায়, চলতি বছর জেলার দশটি উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় ৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি থেকে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কৃষকরা ৭ হাজার ২০৮ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করেছেন। জমিতে আবাদ বেশী হওয়ায় স্বাভাবিক কারণেই ফলনও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, রঙিন ফুলকপি ভিটামিন-সি, ই, কে, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজসহ বিভিন্ন ধরনের ক্যারোটেনেয়ড সমৃদ্ধ সবজি। এই সবজি ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। এ এলাকার রঙিন ধরনের শাকসবজির প্রতি কৃষদের আগ্রহ অনেক বেশি। সেজন্য কৃষকরা রানি গোলাপি (বেগুনি) ও হলুদ ফুলকপি প্রথম চাষ করে অধিক লাভবান হয়েছেন। আমরা চাই সব কৃষকের মাঝে তথ্যপ্রযুক্তির নতুনত্ব পৌঁছে দিতে। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।