রিপন কান্তি গুণ, বিশেষ প্রতিনিধি: গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ফলে নতুন করে আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান জানান, আজ (২ জুলাই) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে উব্দাখালী নদীর ডাকবাংলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে উপজেলার কৈলাটি, বড়খাপন, পোগলা, খারনৈ, রংছাতি, ও কলমাকান্দা সদরসহ সাতটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পানি বাড়ছে সোমেশ্বরী ও কংশ নদীতেও। সোমেশ্বরীর পানি বেড়ে দুর্গাপুর পয়েন্টে ১ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। এ ছাড়া কংশ নদীর পানি বেড়ে জারিয়া পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার এবং ধনু নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পানিতে তলিয়ে গেছে কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, কলমাকান্দা-সাঈদপাড়া, মন্তলা-ইসবপুর, উদয়পুর-বড়খাপন, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও,নসহ বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক। এছাড়া খলা, বাসাউড়া, বাহাদুরকান্দা, ডুবিয়ারকোনা, ধীতপুরসহ অন্তত ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আবারও কলমাকান্দার অর্ধশতাধিক গ্রামে পানি ঢুকেছে। সপ্তাহ ঘুরে নতুন করে আরও বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন উপজেলা সদরসহ নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা।
তারা আরও জানান, গত রবিবার থেকে নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। যতই সময় যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি ততই ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
উপজেলার আমবাড়ি গ্রামের কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘দেখতে দেখতে পানি বাইর্যা গেছে। এক সপ্তাহ আগেই একটা বন্যা কাটাইয়া উঠলাম। অহনও হেই বন্যার জেরই কাটাইয়া উঠতাম পারি নাই। অহন আবার নতুন বিপদ সামনে আইছে।’
কলমাকান্দার খারনৈ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, ইউনিয়নের বাউসাম, লক্ষ্মীপুর, শ্রীপুর, খাগগড়া, বিশ্বনাথপুর, সেনপাড়া, রুদ্রনগরসহ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। কয়েকটি বাড়ির উঠানে ও কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি উঠেছে। আর এক থেকে দেড় ফুট পানি বাড়লে প্রচুর বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাবে।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার তাতিয়র গ্রামের বরুণ সরকার বলেন, ‘আমাদের গ্রাম থেকে মূল সড়কে যাওয়ার সংযোগ সড়কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে খুব কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়। আশপাশের গ্রামগুলোতেও পানি ঢুকছে। বাড়ির চারপাশেই পানি আর পানি। হু হু করে পানি বাড়তাছে। গরু-বাছুর নিয়ে খুবই বিপদে আছি।’
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, উব্ধাখালি নদীর পানি বেড়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সদর, বড়খাপন, পোগলা ও কৈলাটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল বেশি তলিয়েছে। এ ছাড়া নাজিরপুর, লেঙ্গুরা ইউনিয়নের কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্য মোকাবেলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসার মতো অবস্থা হয়নি। তবে আশ্রয়কেন্দ্র ও পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা রয়েছে।