রিপন কান্তি গুণ, বিশেষ প্রতিনিধি (নেত্রকোনা): গত ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় নেত্রকোনায় বন্যার পানি আরো কমেছে।জেলার নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করায় নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। উঁচু এলাকায় বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেছে। তবে নিচু এলাকাগুলোয় সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে পানি পুরোপুরি নামেনি। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলার বিভিন্ন নিচু এলাকার মানুষের।
আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল থেকে কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে বন্যা কবলিত নিচু এলাকার মানুষদের দুর্ভোগ এখনও কমেনি। গবাদিপশুর খাদ্য সংকটের কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা।
সড়ক যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় অনেক এলাকায় নৌকা ও ভেলায় যাতায়াত করতে হচ্ছে। এবারের বন্যায় নেত্রকোনা সদর, কলমাকান্দা, বারহাট্টা ও খালিয়াজুরী উপজেলার প্রায় ১২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান জানান, আজ শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ জেলার প্রধান নদী উব্ধাখালি নদীর পানি কমে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে।
তিনি আরও জানান, হাওরের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধনু নদের পানি খালিয়াজুরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে। এছাড়া সোমেশ্বরী, কংশসহ প্রতিটি নদ-নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। কংশ নদের পানি জারিয়া পয়েন্টে কমে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে বইছে। সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।
বারহাট্টা উপজেলার চিরাম ইউনিয়নের খৈকোণা গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দফা বন্যার ক্ষতি পুষাইয়া উঠতে না উঠতেই আবার দ্বিতীয় দফার বন্যায় কবলে পড়ছি। অহন গরু-বাছুর লইয়া খুবই বিপদের মধ্যে আছি। নিজেরার খাওনেরই কোন ঠিক নাই, গরু-বাছুররে কি খাওয়াই। মাঠে ঘাস নাই। আগের বন্যার পানি আর অহনের পানি মিলাইয়া মাঠ ডুবাইয়া গেছে। গোছালায় কিছু খড় আছিল। সেগুলা দিয়া কি আর গরুর খাওন মিটানো সম্ভব?।’
কলমাকান্দা উপজেলা সদরের ঘোষপাড়া এলাকার বাসিন্দা ঝন্টু সরকার বলেন, ‘ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় এখন পানি কিছুটা নামছে কিন্ত জনদুর্ভোগ কমে নাই। এখনও বাজারে গেলে কাদা মাড়িয়ে যেতে হয়। আমাদের এলাকার লোকজনে কষ্টের শেষ নেই।’
কলমাকান্দা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা সেলিম তালুকদার বলেন, আগের বন্যার পানিতেই রাস্তা তলায়া গেছিল এখন আবার নতুন পানি আইসা সব ডুবাইয়া ফেলাইছিল। অহন পানি নামছে। কিন্তু রাস্তা ভাইঙা চুরমার অইয়া গেছে। অহন আর চলাচল করন যায়না। বাজার-ঘাটে যাওন যায়না। আমরা সবাই বড় বিপদের মধ্যে আছি।’