রিপন কান্তি গুণ, বিশেষ প্রতিনিধি (নেত্রকোনা): বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার তোপের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশ ত্যাগের পর থেকে চলমান পরিস্থিতিতে নেত্রকোনা জেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আত্মগোপনে যাওয়া এসব নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ দলীয় শীর্ষ পদধারী নেতারা। গোপনে দেশ ছেড়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার দেশ ত্যাগের চেষ্টাও করছেন। এদিকে সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছেন বিরোধীরা। হামলা-মামলার ভয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
সরেজমিনে জেলা শহরসহ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখাগেছে, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের প্রধান ফটক বন্ধ করে অফিসিয়াল কার্যক্রম চলমান থাকলেও কোন জনপ্রতিনিধিদের দেখা পাওয়া যায়নি। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও কম।
এ ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আমিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শামছুর রহমান লিটন, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান, সাবেক যুব ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী আরিফ খান জয়, মাসুদ খান জনিসহ শহরের নেতৃস্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীল কাউকেই শহরে দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘দলীয় প্রধান, বড় পর্যায়ের নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন। আমদের মতো ছোট পর্যায়ের দলীয় নেতা-কর্মীরা এখন কোথায় যাবো? সুসময়ে যাদের পাহারা দিয়েছি, পাশে থেকেছি। দলকে সংকটের মুখে ফেলে রেখে দলীয় প্রধানের এভাবে দেশ ছেড়ে পলায়ন, এতদিন যাদের ছত্র ছায়ায় ছিলাম- তারাই এখন নিজেদের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত, তাদের জন্যই আমাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিরোধী পক্ষের লোকজনেরা। আমরা সাধারণ নেতাকর্মীরা আছি মহা বিপদে, সবসময়ই আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে আমাদের। রাজনীতি নামটি এখন আমাদের কাছে ঘৃণা লাগছে।’
জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সহসভাপতি হায়দার জাহান চৌধুরী বলেন, ‘দলীয় প্রধানসহ এমপি-মন্ত্রীদের দেশত্যাগ, স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের আত্মগোপনে যাওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি সাধারণ নেতাকর্মীরা। তাদের ঝুঁকিতে ফেলে এভাবে দলীয় প্রধান দেশত্যাগ করবেন কেউ ভাবেননি। সাধারণ কর্মীরা এখন হামলার শিকার হচ্ছেন। তাদের বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং মারধর করা হচ্ছে।’