রিপন কান্তি গুণ, বিশেষ প্রতিনিধি (নেত্রকোনা): সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উপলক্ষে নেত্রকোনার শহর থেকে গ্ৰাম পর্যন্ত প্রতিটি মহল্লায় প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা।
এ আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ দেবী দুর্গার প্রতিমা। এছাড়াও দেবী দুর্গার বাহন সিংহসহ মহিষাসুরের প্রতিমাসঙ্গে দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী, দেবতা কার্তিক, গণেশ, এবং তাদের বাহন পেঁচা, হাঁস, ইঁদুর আর ময়ূর।
আগামী (৯ অক্টোবর) বুধবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপুজা এবং (১৩ অক্টোবর) রবিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গাপূজা। এর আগে আগামী (২ অক্টোবর) বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু। শারদীয় দুর্গোৎসবের বাকি এক মাসেরও কম সময়। এখন থেকেই চারদিকে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ।
সরেজমিনে নেত্রকোনা পৌর শহরসহ জেলা কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখাগেছে, মন্দিরে কারিগরা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। একনিষ্ঠ চিত্তে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটি লাগানোর কাজে ব্যস্ত শিল্পীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কেউ কাদা তৈরি করছেন, কেউ আবার কাদা দিয়ে হাত-পা বানাচ্ছেন। বেশিরভাগ এলাকাতেই প্রতিমাতে কাদামাটি লাগানোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর শুরু হবে প্রতিমাতে রংতুলির ছোঁয়া ও সাজসজ্জার কাজ।
পৈতৃক পেশায় জড়িত পাল সম্প্রদায়ের কারিগররা খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন প্রতিমা। পূজার সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে। এর মধ্যে অনেকেই প্রতিমা তৈরির অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
এমনই এক প্রতিমা শিল্পীর কর্ণধার সুদীপ্ত পাল বলেন, ‘প্রতিবছর দুর্গা প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম ও চাহিদা বাড়লেও বাড়েনি প্রতিমার দাম। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি।’ এবার কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা।
মদন উপজেলার প্রতিমা তৈরির কারিগর রজনী পাল বলেন, ‘অতীতে যেভাবে মানুষ মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করত, সেই চাহিদা না থাকায় আমাদের প্রায় সারা বছরই অলস সময় কাটাতে হয়। তবে দুর্গাপূজা চলাকালে প্রতিমা তৈরি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে সারা বছর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। আবার চলতি বছর প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা প্রতিমার দাম বাড়াচ্ছে না। এতে আমাদের যে টাকা আয় হওয়ার কথা, তা আর হচ্ছে না।’
বারহাট্টা উপজেলা সদরের গড়মা কালীবাড়ি পূজার প্রতিমা শিল্পী রতন পাল বলেন, আমি দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও সকল ধরনের প্রতিমা আমরা তৈরি করি। এবার ১৪টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে রং, তুলি ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রতিমা তৈরির মজুরি কম পাওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে শিল্পীদের। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় একটু কম।
নেত্রকোনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র পন্ডিত বলেন, জেলার ১০টি উপজেলার সব মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গোৎসবের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে দুর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ও নিরাপদে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালনের জন্য সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য কয়েক স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। নেত্রকোনা জেলায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।