রিপন কান্তি গুণ, বিশেষ প্রতিনিধি (নেত্রকোনা): তীব্র দাবদাহ সাথে অনিয়ন্ত্রিত লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। দিন-রাত মিলে গড়ে ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকায় নাভিশ্বাস অবস্থা নেত্রকোনার বিভিন্ন উপজেলার মানুষের।
প্রচণ্ড গরম ও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় নেত্রকোনা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ গ্রহকদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। অসহনীয় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। তীব্র তাপদাহের ফলে ঘেমে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা।বাদ যাচ্ছেন না বয়স্করাও।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ও লোকজনের সাথে কথা বলেলে তারা জানান, উপজেলা সদরে গড়ে (৮-১০) ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকলেও গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ- আমাদের তো বিদ্যুতের দেখা পাওয়াই মুশকিল। গ্রামে বিদ্যুৎ একবার গেলে আর আসে না, সারাদিনে প্রতি ঘন্টা পরপর (২০-৩০) মিনিট বিদ্যুৎ থাকে। বিদ্যুতের দেখা পাওয়ার আশায় তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় থাকতে হয় গ্রামে বসবাসকারী বাসিন্দাদের।প্রচন্ড গরমে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলের মানুষের আর এরই মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে অসহনীয় লোডশেডিং। কোন শিডিউল ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
বারহাট্টা উপজেলা সদরের বারঘর গ্রমের সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন অন্যদিকে এমন লোডশেডিং বিড়ম্বনা। দিনের বেলা লোডশেডিং সহ্য করা যায়, কিন্তু রাতের বেলা এ লোডশেডিং কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পরবে। এবারের লোডশেডিং যেন অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এমনকি তাপমাত্রা কম থাকলেও গ্রাহক দিন-রাতের লোডশেডিং বিড়ম্বনা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এমন দুর্ভোগ থেকে আমরা মুক্তি চাই।
মোহনগঞ্জের বিরামপুর গ্রামের পোলট্রি খামারি রতন সরকার বলেন, একদিকে তীব্র গরম অপরদিকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে গরমে স্ট্রোক করে খামারের মুরগি মারা যাচ্ছে। সারা দিনে ৩-৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও সেটি মিসড কলের মতো। এছাড়া বিদ্যুতের ভোল্টেজও কম।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার তাতিয়র গ্রামের বাসিন্দা শারমিন আক্তার বলেন, তীব্র গরমে বাসায় টিকে থাকাই মুশকিল। অপরদিকে এ তীব্র গরমে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। গরমে কেন এত লোডশেডিং হয় জানি না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যেন বিষয়টি সুরাহা করেন।
নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম আতিকুর রহমান সরকার জানান, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৫১ দশমিক ৮৭ ভাগ গ্যাসনির্ভর। গ্যাস-সংকটের কারণে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত লোডশেডিং দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি। যেটুকু বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সেইটুকুই ভাগ-বণ্টন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় সময়গুলোতে যেন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়, সে জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে।