ইতিমণি নিজস্ব প্রতিবেদক :
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ঢাকের বাদ্য, মন্ত্রপাঠ, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, সিঁদুর খেলা, খোল-করতাল ও গান বাজিয়ে চোখের জলে বিশ্বজননী মা দেবী দুর্গাকে গতকাল রোববার বিদায় জানান দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। পাশাপাশি আসছে বছর আবারও মা দূর্গা মর্ত্যলোকে ফিরে আসবেন এই প্রার্থনাই করেন তারা। রাজধানীর একদিক দিয়ে বয়ে যাওয়া তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে এদিন জড়ো হন মা দূর্গার বিপুলসংখ্যক ভক্ত বৃন্দরা। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকাতেও দেখা যায় বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমাও নদীতে বিসর্জন দেওয়া হয়। ঢাকার বাইরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবনী পয়েন্টে গতকাল কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে সাগরে বিসর্জন দেওয়া হয় ৩৪০টি প্রতিমা।সেই সাথে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতেও বিপুলসংখ্যক মানুষের ভিড় দেখা যায়। পতেঙ্গায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে চলে প্রতিমা বিসর্জন। প্রতিমা বিসর্জনের সময় অশ্রুসিক্ত দেখা যায় অনেক ভক্তের। আবার অনেকে সময়টি সুন্দর করে কাটাতে নেচে-গেয়ে উদযাপন করেন। বিজয়া দশমীতে পূজা উদযাপনের প্রধান আচারের অংশ হিসেবে সকল হিন্দুধর্মাবল্বী নারীরা সিঁদুর খেলায় যোগদান করেন। শহরের মণ্ডপ ও মন্দিরে প্রথমে দুর্গার পায়ে সিঁদুর নিবেদন করেন নারীরা। পরে একে অপরের গায়ে সিঁদুর মাখিয়ে জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। তাদের বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, দেবী দুর্গা এবার দোলনায় বা পালকি চড়ে স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোকে অর্থাৎ পৃথিবী এসেছিলেন। যার ফল ছিল মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। দেবী স্বর্গলোকে গিয়েছেন গজে অর্থাৎ হাতি চড়ে। যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। শারদীয় দূর্গাৎসব বা বিজয়া দশমী উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। দিনটি উপলক্ষে সকালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে শুভেচ্ছা ও মত বিনিময় করেন। এবার ঢাকা মহানগরীর ২৫২টি সহ সারাদেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উপলক্ষে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনসহ বিভিন্ন মণ্ডপে বসে মেলা। জানা যায় যে, পূজা শেষ হলেও কোথাও কোথাও মেলা চলবে আরও দু-তিন দিন। শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিনের মূল আকর্ষণ ছিল বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জন। গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিকেল ৪টায় মেলাঙ্গনের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ প্রাঙ্গণ থেকে এক সাথে শুরু হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামণ্ডপ থেকে পূজারিরা ট্রাক ও ঠেলাগাড়িতে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হন মন্দির মেলাঙ্গনে। যেখানে দেখা যায় ভক্তদের নাচ-গানে মুখর হয়ে আছে চারপাশ। তারা রং ছিটিয়ে, ঢাকঢোলসহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি উলুধ্বনি দিয়ে উৎসবমুখর করে তোলেন পরিবেশ। শারদীয় বিজয়া দশমীকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বিশেষভাবে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
দেশবাংলা প্রতিদিন /ইতিমনি