মনোয়ার বাবু, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। পৌরশহরের লালমাটি শ্যামপুর এলাকায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটাসহ জমি ভরাট কাজে বিক্রি অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী ছামছুজ্জামান মানিকের বিরুদ্ধে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপেও এই মাটি ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, পৌরশহরের শ্যামপুর এলাকায় এক্সক্যাভেটর দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। কেটে নেওয়া মাটি ড্রাম ট্রাকে করে মহাসড়ক দিয়ে ইটভাটায় পাঠানো হচ্ছে। এসব মাটি পরিবহনের কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৮ থেকে ১০টি ট্রাক। পুকুর তৈরীর নামে বিপুল পরিমাণ জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন তিনি।আলাপকালে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, ছামছুজ্জামান মানিক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এই মাটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নিজের এবং আশেপাশের ব্যক্তিদের থেকে মাটি কিনে তা ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির অভিযোগ করেছেন অনেকে।পৌরশহরের তামিম নামে এক যুবক জানান, তার বাবা ২৫-৩০ বছর আগে পৌরশহরের শ্যামপুরে ৫০১ শতাংশ জায়গা ক্রয় করে। সেই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত ওই জায়গা নিজেরা ভোগদখল করে আসছেন। কিছু দিন আগে তার বাবা মারা যান। এই সুযোগে মানিক নামে ওই ব্যক্তি তাদের ভোগদখলে থাকা জায়গার ২২ শতাংশ দখলে নিয়ে এক্সক্যাভেটর দিয়ে ড্রাম ট্রাক বোঝাই করে মাটি কাটতে থাকে। বাঁধা দিতে গেলে ওই জায়গা নিজে বলে দাবী করেন মানিক। এই বিষয়ে পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব থাকা উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে তিনি জানান।অভিযুক্ত ছামছুজ্জামান মানিকের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তিনি একটা ২২ শতাংশ পুকুর খনন করছেন। স্থানীয় আমার কিছু শত্রু আছে তারা এই বিষয়টাকে অনেক বেশী করছে। এখানে তো আমি মানুষের জমিতে পুকুর খনন করছি না! অন্যের জমি দখলে নিয়ে মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা সত্য নয়। আমি অভিযোগকারীকে বলেছি, ৩০ বছর থেকে তোমরা ফাও জমি খাচ্ছো। তোমরা তোমাদের কাগজপত্র নিয়ে আসো, যদি তোমাদের জায়গা হয় তবে ছেড়ে দিবো। তাছাড়া ওই জায়গা আদিবাসীর কাছ অবমুক্ত করেছি, খারিজ- খাজনা দিয়ে আমার নামে পারমিশন করে নিয়েছি। শুধু দলিল করা বাকি আছে।
মাটি কাটার অনুমতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে আমার জায়গায় বড় পুকুর খননের সময় আগের ইউএনও এর কাছে অনুমতি নেওয়া হয়েছে। সেই পেপারস আছে। ইউএনও মাটি কাটার অনুমতি দিতে পারে কি? এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, হ্যাঁ পারে। তাছাড়া এখনতো আমি আমার বড় পুকুরের সাথে ছোট পুকুরের মাটি কাটছি।এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল আল মামুন কাওসার বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার খবর পেলেই তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল থেকে একটি এবং মহাসড়ক থেকে মাটি বোঝাই আরও দুটি ট্রাক জব্দ করা হয়। ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়া চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।