
গোলাম সারোয়ার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যুরোঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে ৪০০ ও ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন।
এপিএসসিএল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মেঘনা নদী দখল করে গড়ে উঠা জেটির কারণেই বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি উৎপাদনের পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
মেঘনা নদীর তীর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া বিআইডিব্লিটিএ জানিয়েছে যে, ইজারার শর্ত ভঙ্গ করেছেন ইজারাদার। এজন্য জেটি সরিয়ে নিতে ইজারাদার পাশাপাশি অপসারণের ব্যবস্থা নিতে থানা পুলিশকেও অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় মেঘনা নদী ও তীর দখল করে জেটিঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। যেটি দিয়ে পণ্য উঠানামা করা হয়।আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজ ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জন্য বিএডব্লিউটিএ-এর মেঘনার তীর ইজারা নিয়ে ঘাটটি নির্মাণ করেন।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকের কাছে ১ ডিসেম্বর এপিএসসিএল নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদের দেওয়া এক চিঠিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় জনগণ মেঘনা নদী ভরাট করে জেটি নির্মাণ করেছেন। এর ফলে শত শত ট্রাক ভারি মালামাল নিয়ে ৪০০ মেগাওয়াট ও ২২৫ মেগাওয়াটের দুটি পৃথক পাওয়ার প্ল্যান্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছে।এতে করে সড়কের নিচে থাকা পাওয়ার প্ল্যান্টের কুলিং ওয়াটার পাইপ, ‘র’ ওয়াটার পাইপ, ফায়ার সার্ভিস ওয়াটার পাইপ, খাবার পানির পাইপলাইন ঝুঁকিতে পড়েছে। পাশাপাশি বালু ফেলে নির্মাণ করা সড়কটির ধুলার কারণে প্ল্যান্টের এয়ার ফিল্টার জ্যাম হয়ে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে পাওয়ার প্লান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পাওয়ার প্লান্টের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়ার শঙ্কাও প্রকাশ করা হয় চিঠিতে।এপিএসসিএলর ওই কর্মকর্তা আরো অভিযোগ করেন যে, নদীর মাঝ পর্যন্ত ভরাট করে জেটি নির্মাণ করায় স্রোত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।ফলে অদূর ভবিষ্যতে ইউনিটের ওয়াটার ইনটেক চ্যানেলে পলি জমা হয়ে নদীর নাব্যতা হারিয়ে পানির অভাবে প্লান্ট বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারি সম্পদ রক্ষায় জেটিটি অন্যত্র সরানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়।বিআইডব্লিউটিএ-এর আওতাধীন আশুগঞ্জ-ভৈরব বাজার নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন খান গত ১ ডিসেম্বর এক চিঠিতে ইজারা শর্ত ভঙ্গে অভিযোগে মো. শাহজাহানকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে জেটি সরানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ৩ ডিসেম্বর ওই কর্মকর্তা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চিঠি দেন।এ বিষয়ে ইজারাদার মো. শাহজাহান সিরাজ সাংবাদিকদের জানান, ইজারার শর্ত মেনে তিনি সেখানে মালামাল ওঠানামা করাচ্ছেন। যদি সরকার আর ইজারা দিতে না চায় তাহলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে সেটা বাতিল করবে। সংশ্লিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষের অনৈতিক দাবি পূরণ করতে না পারায় তারা উঠেপড়ে লেগেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম এ বিষয়ে এপিএসসিএলর কাছ থেকে চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, জেটির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।