
আজমিরীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় সাব মার্সিবল পাম্প ও গভীর নলকূপ স্থাপন, স্ট্রাকচার ও প্লাটফর্ম নির্মাণে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে অগোছালো স্ট্রাকচার ও পরিমাপের তুলনায় ছোট প্লাটফর্ম তৈরি করে প্রকল্প হস্তান্তরের মাধ্যমে বিল আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্টান ও সংশ্লিষ্ট লোকজন। প্রায় ৩ কোটি টাকার এমন প্রকল্পে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ ঘটনায় ব্যপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্টান সমূহ এলাকার সচেতনমহল ও ভূক্তভূগীদের মাঝে। এরই মাঝে সহকারী প্রকৌশলীকে একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মেকানিক বীরেন্দ্র চন্দ্র দাস।
জানা যায়,আজমিরীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে সারা দেশের ন্যায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন যথাক্রমে আজমিরীগঞ্জ সদর সহ বদলপুর, জলসুখা, কাকাইলছেও ও শিবপাশা ইউনিয়নে সর্বমোট- ১০০টি সাব মার্সিবল পাম্প ও ৩০ টি গভীর নলকূপ সহ স্ট্রাকচার ও প্লাটফর্ম নির্মাণের জন্য প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। প্রতিটি সাব মার্সিবল পাম্প ও গভীর নলকূপ, স্ট্রাকচার ও প্লাটফর্ম নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। পুরো কাজের দ্বায়িত্ব পায় বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্টান। এদিকে স্ট্রাকচার ও প্লাটফর্ম নির্মাণে সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রবিউল ইসলামের মধ্যস্হতায় সাব ঠিকাদার হিসেবে বানিয়াচংয়ের মোঃ হাবিবুর রহমানকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতিটি স্ট্রাকচার ও প্লাটফর্ম নির্মাণে ২৩ হাজার টাকা করে নির্ধারণ করে দেয়া হয়। যথাসময়ে কাজ শুরু করে শেষের দিকে গেলেও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার গাফিলতির সুযোগে বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স ওয়ার্ক অর্ডার ডিজাইনে উল্লেখিত নির্দেশানুযায়ী কাজ না করে ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে অগোছালো স্ট্রাকচার ও পরিমাপের তুলনায় ছোট প্লাটফর্ম তৈরি করে প্রকল্প হস্তান্তরের চেষ্টা করে। এদিকে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা সংক্রান্ত ঝামেলায় আজমিরীগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর তাদের দেয়া প্রকল্পের ( সাব মার্সিবল নলকূপ স্থাপন, স্ট্রাকচার ও প্লাটফর্ম) আভ্যন্তরীন তদন্ত করে। মাঠ পর্যায়ে তদন্ত করে বেশ কয়েকটি অনিয়মের সত্যতা তুলে ধরেন একই অধিদপ্তরের মেকানিক বীরেন্দ্র চন্দ্র দাস। আজমিরীগঞ্জ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী বরাবরে প্রেরিত এক তদন্ত রিপোর্টে তিনি উল্লেখ করেন, সাব মার্সিবল নলকূপ স্থাপন, স্ট্রাকচার ও প্লাটফর্ম নির্মাণে অতি নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিজাইন ও ইস্টিমেট অনুযায়ী স্ট্রাকচারের সলিং ৩ ইঞ্চি, সিসি ৩ ইঞ্চি, ইটের গাঁথুনি ১৫ ইঞ্চি, মাটির উপরে ইটের গাঁথুনি ১০ ইঞ্চি, গাঁথুনির উচ্চতা ১০ ইঞ্চি, আরসিসি স্ল্যাব ৩ ইঞ্চি, গোলাকার স্ল্যাবের ব্যস ৪ ফুট ও আরসিসি ব্লকের উচ্চতা ৬ ইঞ্চি। অর্থাৎ প্রতিটি স্ট্রাকচার ও প্লাটফর্মে ১৬ কেজি রড, ১০ ফুট কংক্রিট, ২৫+৫০= ৭৫ ফুট ভিটাবালু ও বালু, ৬৫০টি ইট, ৬ ব্যাগ সিমেন্ট দেয়ার কথা। এ ছাড়া ভিটাবালু দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু ইটের গাঁথুনি ৩ ইঞ্চি ও মাটির উপরে গাঁথুনি দেয়া হয়েছে ৯.৫ ইঞ্চি, গাঁথুনির উচ্চতা ৪ ফুট, আরসিসি স্ল্যাব ২ ইঞ্চি, গোলাকার স্ল্যাবের ব্যস ৩ ফুট ৪ ইঞ্চি সহ আরও ব্যপক অনিয়ম করা হয়েছে। অর্থাৎ ১৬ কেজির স্থলে ৫ কেজি রড, ১০ ফুটের স্থলে ৫ ফুট কংক্রিট, ৫০ ফুটের স্থলে ২৫ ফুট বালু, ৬৫০ টির স্থলে ৩৫০ টি ইট, ৬ ব্যাগের স্থলে ৩ ব্যাগ সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে স্ট্রাকচার ও প্লাটফর্ম যে কোন সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রবিউল ইসলামকে ফোন করা হলে,উনি তা রিসিভ করেননি।