প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, “আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার এখনও কম। কম সাক্ষরতার মানুষদেরকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে যুক্ত করাটা একটি চ্যালেঞ্জ। সাক্ষরতা অর্জন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং এটি এখন বেশি জরুরি। সে লক্ষ্যেই আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) কিভাবে কাজে লাগাতে পারি, তা নিয়ে ভাবছি।”
রোববার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় সেগুন বাগিচাস্থ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের অডিটরিয়ামে আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস-২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও শিক্ষা: যান্ত্রিক স্বয়ংক্রিয়তার যুগে মানবসত্তা ও মানবিক ক্ষমতার স্বকীয়তা, সুরক্ষা এবং বিকাশ” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের চিন্তার বাহন হলো ভাষা। আমাদের মুখের ভাষাই আমাদের মূল চিন্তার বাহন। ভাষা আয়ত্ত্ব করা হচ্ছে, চিন্তাকে আয়ত্ত্ব করার প্রথম ধাপ। ভাষা ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব নয়। এখন বিশ্বব্যাপী সায়েন্স, টেকনোলজি এবং ম্যাথমেটিক্সের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে শিশুকে মাতৃভাষায় দক্ষ করে তোলা এবং যে ভাষা সে জন্ম থেকে শিখে নেয়, স্কুল তাকে অক্ষরের সাথে পরিচিত করায়।”
উপদেষ্টা আরও বলেন, “মানুষের সৃজনশীলতা, নৈতিকতা এবং সেইসব গুণাবলীর উন্মেষ আমরা প্রাথমিক স্কুলে শুরু করতে পারি। এইভাবে যদি শিশুকে বড় করি, সে মাতৃভাষায় দক্ষতা অর্জন করে, গাণিতিক ভাষায়ও দক্ষ হয়ে উঠবে। আমাদের সফলতার দুটি দিক—একটি ভাষাগত দক্ষতা, আরেকটি গাণিতিক দক্ষতা। গাণিতিক দক্ষতা তার সৃজনশীলতা, বৈচিত্র্যবোধ, নৈতিকতাবোধের উন্নতি ঘটাবে। এভাবে বড় হয়ে শিশুটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আয়ত্ত্ব করে মানবকল্যাণে ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।”
তিনি আরো বলেন, “তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের হাতিয়ারে পরিণত হবে যদি আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাই। সমাজে বৈষম্য বাড়লে, তা সমাজের উন্নতি ঠেকিয়ে দিতে পারে। সামাজিক সংঘর্ষের কারণে আমরা অর্জিত সাফল্য ধরে রাখতে পারব না।”
আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্যান্য বক্তারা বলেন, “মানুষ এখন একটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এখন আমাদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করতে হবে, মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে উৎসাহিত করতে হবে, এবং চিন্তার প্রক্রিয়াকেও উদ্দীপ্ত করতে হবে—এছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। আমাদের যদি এটি করতে হয়, তাহলে শুরু করতে হবে শিশু বয়স থেকেই এবং তা আমরা সাক্ষরতা অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে করতে পারি।”
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের সেক্রেটারি জেনারেল সিদ্দিক জোবায়ের এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী প্রফেসর ড. এম আমিনুল ইসলাম এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মোঃ মাসুদ রানা।