সাভারের আশুলিয়ায় মাইগ্রেশনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে চাইলে ধস্তাধস্তি হয়। এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীও আহত হয়েছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মো. ইয়াহিয়া শুভ বলেন, ‘আমরা এর আগেও একই দাবিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছিলাম। কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাস দিয়েও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই মেডিক্যাল কলেজে আমরা ১৫ লাখ টাকা খরচ করে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু এখন আমরা আমাদের পরিবারের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না। এই মেডিক্যালে কোনো রোগীই নেই। তারা ঠিক মতো শিক্ষার ব্যবস্থা না করেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়েছে।’
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের আশুলিয়ার নরসিংহপুরের সরকার মার্কেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আশুলিয়া থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচী পণ্ড হয়ে যায়।
আরেক শিক্ষার্থী ইমরান খান ইমন বলেন, ‘সড়ক অবরোধ করলে এক পর্যায়ে পুলিশ জোর করে সরিয়ে দিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় পুলিশ আমাদের ওপর লাঠি চার্জ করে। এতে আবু সায়েদ, লিজা, ফয়সাল ও শেফা ফেরদৌসী মৈত্রী নামে চার শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রথম নয়। এর আগেও বিএমডিসির অনুমোদন না থাকা ও নানা অনিয়মের অভিযোগে ২০১৬ সালে প্রায় ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী মাইগ্রেশন করে অন্য মেডিক্যাল কলেজে চলে যায়। নিয়ম অনুসারে তখন এই মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে আদালতের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞার ওপর স্থগিতাদেশ নেয় মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবারও শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করে কলেজটি। ২০১৮ সালে ৪৫ জন শিক্ষার্থী এই মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়। পরে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তারা।
এদিকে পরীক্ষার সুযোগ ও বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন মিলছে না শিক্ষার্থীদের। বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরাই মাইগ্রেশনের রিট আবেদন করে আদালতে। পরে ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাদের মাইগ্রেশন করার নির্দেশনা দেন আদালত। তবে মাইগ্রেশন বাস্তবায়ন করতে হলে এই মেডিক্যাল কলেজকে স্টে অর্ডারের আবেদন বাতিল করতে হবে মর্মে আদালতে আপিল আবেদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে নাইটিংগেল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল কবির রুমি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের দাবি নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক বলেন, ‘সড়ক অবরোধের ফলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি অনেক পরিবহন আটকা পড়ে। আমরা তাদের বুঝিয়ে সরানোর চেষ্টা করেছি। প্রয়োজনে তাদের আইনি সহায়তার কথাও বলেছি। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরও সড়ক অবরোধ না ছাড়ায় আমরা তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা ধস্তাধস্তি শুরু করে। এতে আমাদের এক নারী পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এখন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ নভেম্বর একই দাবিতে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছিল এই মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা।