চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক সময়ের দিনমজুর মোতাহার হোসেন আজ কোটিপতি। জন্ম গোমস্তাপুর উপজেলার নয়াদিয়াড়ী গ্রামে হলেও শৈশব ও বড় হওয়া শিবগঞ্জের চককীত্তি ইউনিয়নের গৌরী শংকরপুর গ্রামে। ২০০৮ সালে প্রবাসে পাড়ি জমানো মোতাহার ২০২১ সালের পর হঠাৎ বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন। তবে তার এই ‘আলাদিনের চেরাগ’ হয়ে ওঠা আর দশজনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।অভিযোগ উঠেছে, মোতাহার হোসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ মানুষের ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ হুন্ডি ও মানব পাচার করেছেন। এসব লেনদেনের দায় গিয়ে পড়েছে ওই একাউন্টধারীদের ওপর। ইতোমধ্যে অন্তত ১০ জন যুবকের বিরুদ্ধে মানব পাচারসহ একাধিক মামলা হয়েছে।ভুক্তভোগী কামাল উদ্দিন জানান, “মোতাহার আমাকে বলেছিলেন, কিছু টাকা আমার একাউন্টে আসবে, আমি যেন তুলে দিই। আমি তাকে বিশ্বাস করে চেকবইও দিয়ে দিই। এক বছরে আমার একাউন্টে প্রায় ১০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এরপর মানব পাচারের মামলায় আমি ৮ মাস জেল খাটি। জেল থেকে বেরিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো আমার ওপর ডাকাতির মামলা দেন মোতাহার।”অন্য ভুক্তভোগী ওমর আলী বলেন, “বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে মোতাহার আমার নামে ইসলামী ব্যাংকে একাউন্ট খুলিয়ে ১০ কোটি টাকার লেনদেন করেন। পরে মানব পাচারের মামলায় আমিও অভিযুক্ত হই। প্রতিবাদ করলে আমাকেও মারধর করে মামলা দেন।”মোফাত খাইরুল ইসলাম বাবু নামের আরেকজন জানান, তার একাউন্ট ব্যবহার করে মোতাহার প্রায় তিন কোটি টাকা লেনদেন করেন। পরে মোহাম্মদপুর ও মাদারীপুরে দুটি মামলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। আপোষ-মীমাংসার মাধ্যমে সেসব মামলা থেকে মুক্তি পেলেও ক্ষোভ থেকে গেছে তার কণ্ঠে- “বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে আমাদের ফাঁসিয়েছেন মোতাহার।”চককীত্তি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আসগার আলী জানান, “মোতাহার সাধারণ ছেলে গুলোর সরলতার সুযোগ নিয়েছে। বহুবার বসা হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।”ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোফাক্ষারুর ইসলাম খাইরুল জানান, “তিন দফা সালিশে মোতাহার স্বীকারোক্তি দিলেও পরে তা অস্বীকার করে সবকিছু অগ্রাহ্য করেন।”
মোতাহার হোসেনের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।এলাকাবাসীর দাবি, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের দোষমুক্ত করে প্রতারক মোতাহারের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা হোক।