ঝিনাইদহে চলছে তালাকের মহামারী। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছেলে-মেয়ের মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটছে অহরহ। তবে তালাকের ক্ষেত্রে ঝিনাইদহে নারীরা এগিয়ে রয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা রেজিস্টার অফিসের পরিসংখ্যান থেকে জেলায় তালাক ও বিচ্ছেদের এমন আশংকাজনক তথ্য উঠে এসেছে। তবে ঝিনাইদহ নিকাহ রেজিস্টাররা বলছেন জেলায় তালাক বা বিয়ে বিচ্ছেদের এই হার আরো অনেক বেশি।ঝিনাইদহ জেলা রেজিস্টার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালে জেলায় মোট বিয়ে হয় ৭হাজার ৩২৭ জন ছেলে মেয়ের। এরমধ্যে তালাক হয়েছে ৩ হাজার ১৭৭ জন দম্পত্তির। প্রতিদিন গড়ে আটটি করে তালাক হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বছর ১১৬৬ জন স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। পক্ষান্তরে পুরুষের পক্ষে তালাক দেয়া হয়েছে ২৫৯টি। আবার উভয় পক্ষের সম্মতিতে তালাক হয়েছে ১৭৫২টি। ২০২৩ সালেও তালাকে এগিয়ে ছিল নারীরা। ওই বছরে ১৭৪৬ জন নারী তালাকের আবেদন করেন। পক্ষান্তরে পুরুষ করে ৩৮৪টি। ২০২৩ সালে ৯ হাজার ৪৬টি বিয়ে হয়। মোট তালাক হয় ৩ হাজার ৯৮৪টি। ২০১৯ সালে থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছরে ঝিনাইদহে ১৮ হাজার তালাকের ঘটনা ঘটেছে। ঝিনাইদহ পৌর কাজী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর জানান, ২০২৪ সালে ঝিনাইদহ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বিয়ে হয় ৮১০টি। আর তালাকের হয়েছে ৩৩৪টি। প্রতি মাসে প্রায় ২৮ জনের তালাক হয়েছে। অন্যদিকে ২০২৪ সালে ঝিনাইদহ পৌরসভায় ৫৫০টি তালাকের নোটিশ জমা পড়ে। আর ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তিন মাসে ৪৪ জন তালাকের নোটিশ জমা দিয়েছেন। প্রতি মাসে ১৪ জনের বেশি তালাক দিচ্ছেন।এছাড়া জেলার ৬টি পৌরসভা, মানবাধিকার সংগঠন, মহিলাবিষয়ক অফিস, মহিলা সংস্থা ও জেলা জজ আদালতের লিগ্যাল এইড অফিসে প্রতিদিন শত শত তালাকের আবেদন জমা পড়ছে। ঝিনাইদহ পৌরসভা থেকে পাওয়া তালাক নোটিশ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পুরুষরা তালাকের কারণ হিসেবে পরকীয়া ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া ও দুর্ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে স্ত্রীর করা আবেদনে শ্বাশুড়ি ও ননদের অত্যাচার, স্বামীর সন্দেহবাতিক মনোভাব, মাদকাসক্তি, নির্যাতন, যৌতুক, মানসিক পীড়ন ও ব্যক্তিত্বের সংঘাত উল্লেখ করা হয়েছে। সাইফুল নামে এক যুবক জানান, সারাদিন বাড়ি না থাকার সুযোগে তার স্ত্রী গোপনে টিকটক করতো। এই কাজ করতে গিয়ে সে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তার গচ্ছিত টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। তার একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে।