
নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ত্রিমোনী উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির ১নং সভাপতি প্রার্থী কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মকলেছুর রহমান বাবুর জমাদানকৃত ডিগ্রি পাশের সনদ সম্প্রতি ভূয়া প্রমানিত হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশের পর নিজেদের রক্ষা করতে স্থানীয় করতোয়া পত্রিকায় পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ দেন দুই পক্ষ। এতেকরে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।জানা যায়, ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে বোর্ডের নির্দেশনানুযায়ী প্রধান শিক্ষক জনসাধারণের মাঝে প্রার্থীতার আহ্বান করলে সভাপতি পদের জন্য তিনজন প্রার্থী তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রতিষ্ঠানে জমা করেন। আবেদন দাখিলকারী সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে ১ নম্বর প্রার্থী মকলেছুর রহমান বাবুর শিক্ষাগত সনদ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সন্দেহ দেখা দিলে তারা শিক্ষা অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে উক্ত প্রার্থীর সনদ যাচাই বাছাইয়ের জন্য আবেদন করেন। এরপর নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিসার কর্তৃক পাঠানো আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত সনদপত্রটি যাচাই বাছাই করলে তা ভূয়া প্রমানিত হয়। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এস এম কামরুল আহসান গত ২৪ মে ২৫ তারিখে নওগাঁ জেলা শিক্ষা অফিস বরাবর প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি উক্ত প্রার্থীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এমন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে এলাকাবাসীর বিভিন্ন তোপের মুখে পড়েন উক্ত ভূয়া সনদধারী মকলেছুর রহমান বাবু। যার প্রেক্ষিতে তিনি গত ৩০ জুন দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় একটি প্রতিবাদ লিপি প্রকাশ করেন তিনি। প্রতিবাদ লিপিতে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মুত্তালিব, সহকারি শরীর চর্চা শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক সাইমা ইয়াসমিন ময়না তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যে নাটক সাজিয়েছে। সামাজিকভাবে তার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য তারা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। আহ্বায়ক কমিটির জন্য দাখিলকৃত সনদটি আমার না আমি ঐটা দেইনি। তিনি আরও বলেন আমি আহ্বায়ক কমিটির প্রার্থীই ছিলাম না। আমি সোমবার পত্রে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।অপরদিকে ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) আরেকটি প্রতিবাদ লিপি ছাপিয়ে নেন। যা গত ৫ জুলাই দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।প্রতিবাদ লিপিতে ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোত্তালেব হোসেন জানান, আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি প্রার্থী মো. মকলেছুর রহমান বাবু আমিসহ অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শরীর চর্চা শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম ও সহকারী শিক্ষক সায়মা ইয়াসমিন ময়না এর বিরুদ্ধে যে যে অভিযোগ এনেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যে বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। নিজের অপরাধ ও অপরাধ সুকৌশলে অন্যের কাজে চাপিয়ে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার অপকৌশল মাত্র। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রকৃত ঘটনা এই যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী হতে গত ২৬ ডিসেম্বর২০২৪ তারিখে এডহক কমিটি গঠনের অনুমতির চিঠি পাই। সেই সূত্রে স্থানীয় চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবুসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও অভিভাবকদের সমন্বয়ে আলোচনা আনতে কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে মকলেছুর রহমান বাবুর সুপারিশে ৩ সদস্য বিশিষ্ট সভাপতি প্রার্থীদের স্নাতক পাশের সনদপত্রসহ ও অভিভাবক সদস্যের তালিকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রেরণ করেন। ১ নং তালিকায় মকলেছুর রহমান বাবু একজন সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে কে বা কাহারা তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র যাচাইয়ের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করলে তার সনদপত্র false (ফলস) প্রমাণিত হলে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর, যুগ্ন-পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এস এম কামরুল আহসান ২৪ মে ২০২৫ তারিখে জেলা শিক্ষা অফিসার নওগাঁ বরাবর একটি শাস্তিমূলক প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। বিষয়টি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে সভাপতি প্রার্থী মকলেছুর রহমান বাবু প্রকৃত সত্য ও নিজের অযোগ্য তাকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে আমাদের উপর এই মিথ্যা ও অন্যায় অভিযোগ চাপিয়ে দিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আমাদের কোন ষড়যন্ত্র নেই বরং সে নিজেই ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়ে আমাদের উপর ক্ষিপ্ত ও চড়াও হয়ে আমাদের উপরে দায় চাপিয়ে আইনির ফাঁক দিয়ে বের হওয়ার একটি অপকৌশল অবলম্বন করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।এবিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান বাবুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করে কেটে দেন। তাই তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোত্তালেব হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য তিনি তার কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। সেই কাগজপত্র আমি যাচাইয়ের জন্য পাঠালে তা ভূয়া প্রমাণিত হয়।