জেলার বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহিমকে তথ্য গোপনসহ সরকারি আদেশ অমান্য করে উত্তোলন করা দুই মাসের বেতন ফেরত দিতে চিঠি দিয়েছেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এই টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। অবশেষে বুধবার ব্যাংকে গিয়ে অধ্যক্ষ দুই মাসের বেতনের টাকা ফেরত দিয়েছেন।
জনতা ব্যাংক লিমিটেড, বাঞ্ছারামপুর শাখার ব্যবস্থাপক গত মঙ্গলবার জনতা ব্যাংক বাঞ্ছারামপুর সদর শাখার ব্যবস্থাপক মোঃ আরিফ হোসেন অধ্যক্ষকে বেতন ফেরতের এই চিঠি দেন।
২০১৯ সালের ৩০ জুলাই মাউশির সহকারি পরিচালক ফারহান আক্তার স্বাক্ষরিত চিঠি সূত্রে জানা গেছে, আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের তথ্য গোপন এবং সরকারি বিধি লঙ্ঘণ করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ মাউশির তদন্তে প্রমানিত হয়েছে। মাউশির তদন্তে অধ্যক্ষ আবদুর রহিম বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ পদে আবেদন ও যোগদানের সময় পূর্ববর্তী কলেজে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ও মামলা চলমান থাকার তথ্য গোপন রেখেছিল বলে তদন্তে প্রমানিত হয়। বিধি অনুযায়ি তিনি পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র প্রদান করেননি।
এছাড়া বোর্ড নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আাদায়ের অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হয়। জনবল কাঠামো ২০১৮ এর ১৮.১ (খ) ধারা অনুযায়ী তার এমপিও কেন বাতিল করা হবে না এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আবদুর রহিমকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়। কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে কলেজের শিক্ষকদের এমপিওতে (মাসিক বেতন প্রদান আদেশে) আবদুর রহিমের বেতন বন্ধ করে।
পাশাপাশি ঈদুল ফিতরের ভাতা এমপিওতে এবং বৈশাখী ভাতার এমপিওতে রহিমের নাম বাতিল করে দেয় মাউশি।
কিন্তু অধ্যক্ষ আবদুর রহিম মাউশির এমপিও (মাসিক বেতন প্রদান আদেশ) বাতিলের তথ্য গোপন রেখে কলেজের সভাপতির স্বাক্ষর নিয়ে বেতন বিল তৈরি করে জনতা ব্যাংকে বিল জমা দিয়ে গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের যথাক্রমে ৫৬ হাজার ২৬০টাকা এবং ৬৫ হাজার ২৬০ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যান। পরে বৈশাখী ও ঈদুল ফিতরের ভাতার বিল জমা দেয়ার সময় বিষয়টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপকের কাছে ধরা পড়ে। পরে ব্যাংক ব্যবস্থাপক বিষয়টি সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।
তথ্য গোপনসহ সরকারি আদেশ অমান্য করে জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলিত করা গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন ফেরত দিতে গত মঙ্গলবার জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ আবদুর রহিমকে চিঠি দেয়। অবশেষে অধ্যক্ষ বুধবার ব্যাংকে গিয়ে বর্ণিত দুই মাসের বেতনের টাকা ফেরত দেন।
জনতা ব্যাংক বাঞ্ছারামপুর সদর শাখার ব্যবস্থাপক আরিফ হোসেন জানান, অধ্যক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষরে দিলে আমরা তাদের বেতন-ভাতা দিয়ে থাকি গত পরে বৈশাখী ও ঈদুল ফিতরের বোনাসের জন্য বিল জমা দিলে আমার সন্দেহ হলে আমি বিষয়টি খবর নিয়ে জানতে পারি ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের তার বেতন বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি আমি ইউএনও স্যারকে জানিয়েছি। উত্তোলিত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতনের টাকা আগামি তিন দিনের মধ্যে ফেরত দিতে অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়েছি।
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রহিম জানান, এটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বেতন বন্ধ হতে পারে। জবাব দিতে বলা হয়েছে। আমি জবাব দিলে আবার বেতন চালু হবে। বিষয়টি আমিও জানতাম না। আমি কোনো তথ্য গোপন করিনি।সেজন্য আমি বুধবার ব্যাংকে গিয়ে টাকা ফেরত দিয়েছি।
এ ব্যাপারে বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের আর্থিক বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা জানান, বেতন বন্ধের চিঠি কলেজে আসে। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ব্যবস্থাপক তিনদিনের মধ্যে উত্তোলিত ফ্রেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বেতন ফেরত দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছেন।