প্রকৃতিতে মধু মাসের জয়জয়কার । এ সময় আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ নানা রকেমের সু-স্বাদু ফল পাওয়া যায়। পাশাপাশি গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাঁঠাল।

গ্রীষ্মকালের এ মধু ফলের মাসে অন্যান্য সব ফলের মধ্যে কাঁঠালের জুড়ি অনেক ভার। এখন ফলের মৌসুম হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাঁঠাল। সেই সঙ্গে হাট-বাজারসহ সর্বত্র কাঁঠাল বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি রসালো ও স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় এর কদর রয়েছে অনেক বেশি।

উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আজমপুর এলাকার মো. শাহাদাত হোসেনের বাগানে অন্তত ২৫টি ছোট বড় কাঁঠাল রয়েছে। এর মধ্যে ২টি গাছে এবার শতাধিকের উপর কাঁঠাল এসেছে। যা রীতিমতো সবাইকে তাক লাগিয়েছেন। পাশাপাশি তার অন্যান্য গাছে তার ৪০ থেকে ৫০টির উপর কাঁঠাল এসেছে।

তাছাড়া নুরপুর এলাকার কৃষক মোহাম্মদ আলীর বাড়ি একটি গাছে শতাধিক কাঁঠাল এসেছে। প্রতিদিন এই দৃষ্টি নন্দন কাঁঠাল দেখতে বিভিন্ন এলাকার লোকজন দেখতে আসছেন। এ মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ায় তারা অনেক খুশি।

বাগান মালিক মো. শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি দীর্ঘ বছর সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে অবসরে বাড়িতে এসে পর্যায়ক্রমে ১২ বিঘা জমি ক্রয় করেন। ঐ জমির মধ্যে লেবু, লটকন, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা, পেপে, আনার, বড়ইসহ দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির মৌসুমি ফলের চারা রোপন করেন। এর মধ্যে কাঁঠাল গাছ রয়েছে ২৫টি। দুটি গাছে শতাধিক করে কাঁঠাল এসেছে। এ মৌসুমে তার কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে।

তিনি বলেন, গাছে মকুল আসা থেকে কাঁঠাল পাকা পর্যন্ত ৩ মাস সময় লেগেছে। এ সময় কাাঁঠাল বাগানে প্রচুর সময় দিতে হয়। বাজার দর ভালো থাকলে ভালো টাকার কাঁঠাল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

মোহাম্মদ আলী বলেন, রাস্তার পাশে একটি গাছে শতাধিক কাঁঠাল এসেছে। আসা যাওয়ার পথে সবাই তাকিয়ে থাকে। এ বছরের মতো কোনো সময় এতো কাঁঠাল আসে নাই। এবার ভালো টাকার কাঁঠাল বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

এদিকে দেবগ্রাম, তারাগন, নারায়নপুর, উপজেলার আজমপুর, রামধননগর, চানপুর, দুর্গাপুর, ধাতুর পহেলা, হিরাপুর, খারকোট, মিনারকোট, নিলাখাতসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাঁঠাল। কাঁঠাল ফলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠছে হাট-বাজারসহ পুরো এলাকা। তবে এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় এর কদর রয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

আজমপুর এলাকার চাষি মো. সিরাজ মিয়া বলেন, আমার ৩০টি ছোট-বড় কাঁঠাল গাছ আছে। গত বছরের তুলনায় এবার গাছে ভালই  কাঁঠাল এসেছে। তবে সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কাঁঠালের আকার কিছুটা ছোট রয়েছে। মুকুল আসার সময় আগাম ৩০টি গাছের ফলন পাইকারদের কাছে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।
কাঁঠাল চাষি নুরু মিয়া বলেন, বাড়ির আঙিনায় ও পুকুর পাড়ে আমার ২০টি কাঁঠাল গাছ রয়েছে। সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত বছরের চাইতে এবার কাঁঠাল তুলনামূলক কম আসলেও নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ভাল টাকা আয় হবে।

কাঁঠাল ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন জানান, এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি ও রসালো। তিনি দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ক্রয় করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন। স্থানীয় বাজারে এরই মধ্যে কাঁঠাল বিক্রি শুরু হয়েছে। এক একটি কাঁঠাল নিচে ৮০ টাকা উপরে ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাঁঠাল গ্রীষ্ম মৌসুমের একটি জনপ্রিয় ফল। ছোট-বড় সবাই কাঁঠাল খেতে পছন্দ করে। কাঁঠাল পাকা খাওয়ার পাশাপাশি মানুষের কাছে তরকারি হিসেবে যুগযুগ ধরে কদর পেয়ে আসছে।

চিকিৎসকদের মতে, কাঁঠালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-ই ক্যালসিয়াম ফলিক এসিড রয়েছে। টাটকা ফলে পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রনের একটি ভাল উৎস। তাছাড়া পটাশিয়াম হার্টের গতি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পাকা কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ আঁশ রয়েছে। ফলে পাকা কাঁঠাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম জনগণের খবরডটকমকে বলেন, এ উপজেলা কাঁঠাল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় ১০০ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল চাষ হয়। এখন পযর্ন্ত কাঁঠালের ফলন ভালো রয়েছে। এই ফল উৎপাদনে বাগান মালিকদের তেমন খরচ নেই বলে চলে। ফলন ভালো করতে সার্বিকভাবে চাষিদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়।