গোলাম সারোয়ার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যুরো প্রধান জেলার আখাউড়ায় ধান, সবজি আর মাছ চাষে পাল্টে গেছে এ উপজেলার অর্থনৈতিক অবস্থা। স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যচাষিরা বছরজুড়ে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঐসব চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করছেন। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাণিজ্যিকভাবে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর এ উপজেলা থেকে ধান, সবজি আর মাছ প্রায় ২২৪ কোটি ২৯ লাখ টাকার উপর উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ইরি-বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে ১০৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, আমন ধান উৎপাদন হয়েছে ৪২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার, সবজি উৎপাদন হয়েছে ১৯ কোটি ও মাছ উৎপাদন হয়েছে ৫৪ কোটি টাকার। প্রতি বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৎস্যচাষি ও কৃষকদের মাঝে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
ধান, সবজি ও মাছ চাষে চাঙ্গা হয়েছে এ উপজেলার অর্থনীতি। ঐসব চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বেড়েই চলেছে আবাদ। এখানকার বেশিরভাগ লোকজন সরাসরি কৃষি ও মৎস্য চাষের উপর নির্ভরশীল। কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন ঘিরেই গড়ে উঠেছে এখানকার মানুষদের জীবন জীবিকা। তাই তারা বছরজুড়ে এসব চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার ধরখার এলাকার কৃষক আবু তাহের মিয়া জানান, বর্তমানে কৃষিতে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এখন মাঠে মাঠে চলছে ট্রাক্টর ও সেচপাম্প। যোগ হয়েছে ধানের উচ্চ ফলনশীল ধানবীজ, চারা রোপণ, ধান কাটা ও মাড়াই যন্ত্র। এতে কমেছে কঠোর পরিশ্রম সময় ও খরচ। বেড়েছে ফসল উৎপাদন ও আয়।
তিনি আরো জানান, গত কয়েক বছর ধরে উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদন করে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। ধান উৎপাদনে লাভবান হওয়ায় গত বোরো মৌসুমে তিনি ৪০ বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেন। এতে তিনি ৬৫০ মণের উপর ধান পেয়েছেন।
কৃষক মো. জলিল মিয়া জানান, এক সময় ধান চাষ লোকশান হওয়ায় চাষে তিনি অনেকটাই বিমুখ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করেন। আগে জমি থেকে ধান কাটতে অনেক শ্রমিক লাগতো। কিন্তু এখন আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা মাড়াই ঝাড়াইসহ বস্তা করতে খুবই সহজ হচ্ছে। এতে সময় এবং খরচ তাদের অনেক কম লাগছে।
সবজি চাষি মুস্তাকিম সরকার জানান, দীর্ঘ বছর তিনি প্রবাস ছিলেন। দেশে এসে সবজি চাষের প্রতি মনোযোগি হন। গত প্রায় ৪ বছর ধরে মৌসুম অনুযায়ী প্রায় ২০ বিঘা জমিতে কোনো প্রকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে দেশীয় পদ্ধতিতে মিষ্টি কুমড়া, শসা, টমেটো, বেগুনসহ নানা জাতের সবজি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন।
তিনি আরো জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় যাবতীয় খরচ বাদে বছরে তার আয় হচ্ছে ১৮ লাখ টাকার উপর। সবজিতে কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ চাষ উৎপাদন করে সাফল্যের মুখ দেখেন।
মৎস্য চাষি আবুল মিয়া জানান, গত ১০ বছর ধরে তিনি দেশীয় পদ্ধতিতে পুকুরে রুই, কাতল, গ্রাসকাপ, মৃগেলসহ নানা প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। এ বছর ৫টি পুকুর এক বৎসর চুক্তিতে ও একটি মৎস্য প্রজেক্ট ৭ মাসের জন্য ইজারা নিয়ে নানা প্রজাতির মাছের পোনা ছাড়েন।
তিনি আরো জানান, এক সময় মাছ চাষে বৃষ্টির উপর নির্ভর ছিল। এখন তা নেই। বৃষ্টির অপেক্ষা না করে মেশিনের মাধ্যমে পুকুরে পানি দিয়ে মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত করা হয়। এ মৌসুমে মাছ চাষ করতে প্রথমে পানি সংকট থাকলে এখন তা নেই। বর্তমানে মাছের অবস্থা ও বেশ ভাল রয়েছে। গত মৌসুমে তিনি যাবতীয় খরচ বাদে প্রায় ৬ লাখ টাকা আয় করেছেন। এবারও আশা করছেন অন্তত ৭ লাখ টাকা আয় হবে।
উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, এ উপজেলার বেশিরভাগ মানুষই অর্থনীতি উন্নয়নে মাছ চাষে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। মাছ চাষে বেশি লাভ হওয়ায় দিনের পর দিন এ চাষের পরিধিও বাড়ছে। মাছ চাষের উৎপাদন বৃদ্ধিতে চাষিদের সব সময় পরামর্শ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, এ উপজেলার মৌসুম অনুযায়ী ধান, সবজির পাশাপাশি নানা প্রকার ফল আবাদ হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় ধান ও সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ফলন বৃদ্ধিতে কৃষকদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।