নেত্রকোনার কলমাকান্দায় শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মারধরে জামাই মো. ফরিদ মিয়া (২৭) নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ফরিদ মিয়ার শাশুড়ি আনোয়ারা খাতুন (৪৫), শ্যালিকা উম্মে কুলসুম (১৯) ও কুলসুমের স্বামী সায়েদ আলীকে (২২) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আজ (১ জুন) শনিবার দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জনায় পুলিশ।নিহত ফরিদের মা আজ (১জুন) শনিবার সকালে বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে ফরিদের শাশুড়ি আনোয়ারা খাতুন (৪৫), শ্যালিকা উম্মে কুলসুম (১৯), শ্যালিকার স্বামী সায়েদ আলী (২২) ও প্রতিবেশী মো. সেলিম মিয়াসহ (৪৫) চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জনকে আসামি করা হয়।
এর আগে শুক্রবার বিকালে উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের বামনগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ফরিদ মিয়া বামনগাঁও গ্রামের মো. হাসিম উদ্দিনের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ইটভাটার শ্রমিক। আর গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা একই গ্রামের বাসিন্দা।
পুলিশ ও স্থানীয়দের দেওয় তথ্যসূত্রে জানা গেছে, নিহত ফরিদ মিয়া দুই বছর আগে প্রতিবেশী মৃত সিদ্দিকের মেয়ে ফাতেমা আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁদের সংসারে সাত মাসের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে গত ছয় মাস আগে ফরিদ তার স্ত্রী-সন্তানকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে কুমিল্লায় ইটভাটায় কাজ করতে যান। সেখানে কর্মরত অবস্থায় শ্বশুর বাড়িতে ব্যবহারের জন্য একটি সোলার প্যানেল লাগিয়ে দেন।
ফরিদ মিয়া বৃহস্পতিবার তার গ্রামের বাড়িতে আসেন। পরে শুক্রবার দুপুরে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন- তার স্ত্রী শিশুটিকে নিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে ঢাকায় চলে গেছেন।
সেজন্য রাগেক্ষোভে ফরিদ মিয়া তার টাকায় কেনা শ্বশুরবাড়ির ঘরে লাগানো সৌর বিদ্যুতের সরঞ্জাম নিজ বাড়িতে নিয়ে আসতে গেলে শ্বাশুড়ি ও অন্যরা এতে বাধা দেয়। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ফরিদের শ্বাশুড়িআনোয়ারা বেগম, শ্যালিকা কুলসুমা আক্তার ওরফে ময়না, কুলসুমার স্বামী ছায়েদ আলী ফরিদকে বেধরক মারধর করেন। এক পর্যায়ে ফরিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
ফরিদের বাবা হাসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে ফরিদের শ্বাশুড়ি আনোয়ারা বেগম, শ্যালিকা কুলসুমা আক্তার ওরফে ময়না, কুলসুমার স্বামী ছায়েদ আলী এবং ছায়েদ আলী এক বন্ধু মিলে ফরিদকে বেধড়ক মারধর করেন। পরে খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুমন পাল তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমন পাল বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই ফরিদ নামের ওই ব্যক্তি মারা যান। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
কলমাকান্দা থানার ওসি মোহাম্মদ লুৎফুল হক দেশবাংলা প্রতিদিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আটককৃত ৩ জনকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজ শনিবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে নেত্রকোনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে পলাতক আসামি সেলিম মিয়াকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে