• ঢাকা, বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫, ১১:২০ পূর্বাহ্ন
  • [কনভাটার]
সর্বশেষ খবর
তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপরে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ইতালির লাম্পেদুসা উপকূলে নৌকাডুবিতে অন্তত ২০ শরণার্থী ও অভিবাসীর মৃত্যু শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারের মরদেহে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচারের দাবিতে নেত্রকোনা জেলা জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের আয়োজনে মানববন্ধন কবিতা-মানুষ এক মহাকাব্য আটপাড়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস- .২০২৫ পালিত মদনে গার্ডার ব্রীজ নির্মাণে অনিয়ম:ধসে গেল এ্যাপ্রোচ মদনে স্বামী স্ত্রীকে মারধর রক্তাক্ত জখম করায় থানায় মামলা পৌর উত্তর কাটলী জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন মুফতি ফয়জুল করিমের আগমন উপলক্ষে নেত্রকোনায় ইসলামী আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলন
বিশেষ খবর
কলমাকান্দা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন ফিল্মি স্টাইলে শিক্ষককে তুলে নিয়ে মাথা ফাটাল ছাত্রদল” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন  অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাভোগীদের বিএনপিতে স্থান হবে না আনিসুজ্জামান বাবু নেত্রকোনায় জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার দাবিতে মানব-বন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আ.লীগের নিবন্ধন থাকবে কিনা, যা বললেন সিইসি নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে : সিইসি সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ করছে ইসি: সিইসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০ বছর পর সম্মেলন ঘিরে বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি ষড়যন্ত্র রুখে ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচন আদায় করতে হবে: রুমিন ফারহানা
রিপন কান্তি গুণ, বিশেষ প্রতিনিধি (নেত্রকোনা) / ১৩৭ জন দেখেছেন
আপডেটঃ বুধবার, ৩১ জুলাই, ২০২৪

“যে হারায়, সেই বোঝে হারানোর বেদনা”, স্বজনদের আহাজারি

১ম ছবি (রমজান), ২য় ছবি (জাকির হোসেন), ৩য় ছবি (আহাদুন)

রিপন কান্তি গুণ, বিশেষ প্রতিনিধি (নেত্রকোনা): কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকার ৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহত তিনজনের স্বজনদের আহাজারি- যে হারায়, সেই বোঝে হারানোর বেদনা।

নিহতরা হলেন- নেত্রকোনার সদর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের নন্দীপুর গ্রামের মো. লিটন মিয়ার ছেলে রমজান (২৪), দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের বাকলজোড়া গ্রামের মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন (২৪) এবং কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মো. আহাদুন (১৮)।

নিহত রমজান রাজধানীর রামপুরা এলাকায় একটি কেক-বিস্কুট কোম্পানিতে সেলসম্যানের কাজ করতেন। গত ১৯ জুলাই সকালে কাজে যাওয়ার আগে রমজান তার খালু গোলাম মোস্তফার সাথে রামপুরা এলাকার ওমরআলী গলিতে একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে যান। রমজানের খালু আগে রেস্টুরেন্টে ঢুকে যান, পেছনে ছিলেন রমজান। রেস্টুরেন্টের দরজার কাছ পর্যন্ত যেতেই হঠাৎ সামনে থেকে একটা গুলি এসে রমজানের গলায় ঢুকে পড়ে। মুহূর্তেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তৎক্ষনাৎ উপস্থিত লোকজন তাকে রিক্সায় তুলে কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরিস্থিতি খারাপ দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত রমজানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। তবে ঢামেকে নিয়ে যাওয়ার পথেই রমজানের মৃত্যু হয়। পরে তার মরদেহ বাসায় নিয়ে আসা হয়।

ঐদিন রাতেই পিকআপ ভ্যানে করে লাশ নিয়ে রাত ১১টার দিকে নিহতের গ্রামের বাড়ি পৌঁছে স্বজনরা। পরে রাত ১২টায় জানাযা শেষে দাফন করা হয়।

রমজানের বাবা লিটন মিয়া জানান, গ্রামের একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে রোজগারের উদ্দেশ্যে ৪-৫ বছর আগে রাজধানীতে যায় রমজান। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীন ব্যক্তিই ছিল রমজান। তার রোজগারেই আমাদের পরিবার চলতো। অন্য দুই ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচও চলতো। তার মৃত্যুতে আমাদের সব শেষ হয়ে গেল। এই মৃত্যুর বিচার চাওয়ারও জায়গা নেই। বাবার ঘাড়ে সন্তানের লাশ কতটা ভারী, কতটা বেদনার, সেটা শুধু একজন সন্তান হারা বাবাই জানে। আমার ছেলের জন্য আপনারা দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত দান করেন।

নিহত জাকির হোসেন ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের কাঁচপুর সেতুর কাছে ঠিকাদারের অধীনে ওয়াসার পানির লাইন মেরামতের কাজ করতো। সে তার মায়ের সাথে বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় অনেকদিন ধরে বসবাস আসছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ ও সারা দেশে কারফিউ জারি হওয়ায় কাজ থেকে বাসায় ফেরা সম্ভব হচ্ছিলো না, তাই সেখানেই একটি ভবনে থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।

কাজ শেষে গত ২১ জুলাই বিকেলে জাকির তার সহকর্মীদের সঙ্গে পাশের একটি দোকানে নাস্তা খেতে যায়। এসময় হঠাৎ একটি গুলি এসে তার পিঠে লাগে। গুলি লাগার পর দৌড়ে পাশের একটি গলিতে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জাকির। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরে সহকর্মীরা দ্রুত জাকিরের মরদেহ নিয়ে বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় তার মায়ের কাছে যায়।

ঐদিন রাতেই মা মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পরদিন সকাল ১০টায় জানাযা শেষে জাকির হোসেনের মরদেহ দাফন করা হয়।

জাকিরের মা মিছিলি বেগম বলেন, নিজস্ব ভিটেমাটি না থাকায় ছোটবেলায় জাকিরকে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে রাস্তা থেকে ভাঙারি কুড়িয়ে, মানুষের বাসায় কাজ করে ছেলেকে বড় করতে থাকি। ১৫-১৬ বছর বয়স হওয়ার পর কাজ শুরু করে জাকির। এরপর আমি ভাঙারি কুড়ানো বন্ধ করে দেই। ছেলের আয়ের টাকা দিয়ে কিছুদিন আগে গ্রামে ঘর তৈরির জন্য ১৫ শতক জায়গা কিনেছি। থাকার জন্য একটা ঘর নির্মাণের পরিকল্পনাও করছিলাম। হঠাৎ একটা গুলি এসে আমার সব স্বপ্ন আশা ভেঙে দিয়েছে। আমার আর কোনো আশা নেই। আমার পৃথিবী শেষ হয়ে গেছে। এভাবে বেঁচে থাকারও আর মানে নেই। আল্লাহ যেন এর বিচার করেন।

নিহত আহাদুন পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের মুদির দোকান দেখাশোনা করতো। কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত (২৫ জুলাই) রাতে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকার বৈঠাখালীতে বাসার বাইরে গিয়ে নিখোঁজ হয় আহাদুন। তারপর থেকে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতভর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল ও থানায় খোঁজাখুঁজি করে কোথাও খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরদিন সারাদেশে কারফিউ থাকার কারণে তাকে আর খোঁজা সম্ভব হয়নি।

টিভিতে প্রচারিত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে অজ্ঞাত লাশ রয়েছে এমন খবরে (২৭ জুলাই) ঢামেকে গিয়ে বাবা মজিবুর রহমান আহাদুনের লাশ শনাক্ত করেন। তারপর ময়নাতদন্তসহ নানা আইনি প্রক্রিয়া শেষে (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় লাশ ঢামেক থেকে বের করে আনা হয়। রাতেই আহাদুনের লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তার বাবা।

রাত ৩টার দিকে আহাদুনের লাশ পৌঁছে তার নিজের গ্রামে। পরে (২৯ জুলাই) সকাল ১০টায় জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে আহাদুনের লাশ দাফন করা হয়।

আহাদুন রাজধানীর পূর্ব বাড্ডার ইউসেপ হাজী সিকান্দার আলী টেকনিক্যাল স্কুল থেকে ‘জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্ক’ সাবজেক্টে এবার টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে তার এসএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল।

নিহত আহাদুনের বাবা মজিবুর রহমান বলেন, পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে এক যুগ আগে স্ত্রী ও চার ছেলেসহ নিজের এলাকা ছেড়ে রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বৈঠাখালী এলাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করি। আমি নিজে ডিজেল ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করি। সেই সঙ্গে বাসার পাশেই একটি মুদির দোকান দিয়েছি। আহাদুন স্কুল থেকে এসে দোকানে বসতো। তার অন্য ভাইয়েরাও পালা করে দোকানটা পরিচালনা করতো। সময় পেলে মাঝে মধ্যে আমিও বসতাম দোকানে। কোটা বিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে বাসায় সবার সঙ্গে আম খেয়েছে আহাদুন। পরে কোনো এক সময় বাসা থেকে বের হয়ে গেছে সে। এরপর আর বাসায় ফিরেনি সে।

তিনি আরও জানান, শুক্রবার রাতে টিভিতে খবর দেখি ঢামেকে দুটি অজ্ঞাত লাশ রয়েছে। খবর দেখে শনিবার সকালে ঢামেকে খোঁজ করতে যাই। অনেক চেষ্টার পর বিকেলে ইমাজেন্সি স্টোর রুমে গিয়ে ২০-২৫টি অজ্ঞাত লাশ দেখতে পাই। সেখানে অজ্ঞাত হিসেবে আহাদুনের লাশও ছিল। ছেলের লাশ আমি নিজে শনাক্ত করি। দেখা যায়, একটি গুলি আহাদুনের কানের এক পাশে ঢুকে বের হয়ে গেছে অপর কানের পাশ দিয়ে, আরেকটি গুলি লেগেছে পায়ে। রবিবার সকালে গিয়ে ময়নাতদন্তসহ নানা প্রক্রিয়া শেষ করে সন্ধ্যার দিকে লাশ বের করি।

এ ঘটনায় বিচার চাইবেন কিনা এমন প্রশ্নে মজিবুর রহমান বলেন, বিচার কার কাছে চাইবো, মামলাই বা কার বিরুদ্ধে করবো? কোনকিছু করলেই আমার ছেলে তো আর ফিরে আসবে না। আমার মতো এমন সন্তান হারা যেন যেন আর কেউ না হয় এই দোয়া করি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিষয়ের আরও খবর
August 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

Categories