রিপন কান্তি গুণ, বিশেষ প্রতিনিধি (নেত্রকোনা): নেত্রকোনায় চাঁদাবাজি, হামলা, মারপিটের অভিযোগে নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহীকে প্রধান আসামি করে দুর্গাপুর থানার পর কলমাকান্দা থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে।
কলমাকান্দা থানায় স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শাহীনুর আলম শাহীন বাদী হয়ে চাঁদাবাজি, হামলা, মারপিটেরঅভিযোগ তুলে গত ২৬ আগষ্ট রাতে কলমাকান্দা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে সাবেক সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিনের নির্দেশে অন্য আসামিরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজি কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছেন। এছাড়াও তারা উপজেলার যাত্রাবাড়ি বাজার সংলগ্ন গুমাই নদীর ফেরী ঘাটে অবস্থান নিয়ে নদী দিয়ে চলাচলকারী মালামালবাহী বিভিন্ন নৌকা, যাত্রীবাহী নৌকা থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায় করেছিলেন। সর্বশেষ সোমবার দুপুরে ওই নদী দিয়ে নৌকা করে বালু-পাথর নিয়ে যাওয়ার সময় রুহীর লোকজন নৌকার দুইজন মালিককে আটকে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দেয়ায় তাদের মারধর ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এর আগে, গত ১২ আগস্ট দুর্গাপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার মিঠুন দত্ত নামে এক ব্যক্তি সাবেক সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহীকে প্রধান আসামি করে চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে দুর্গাপুর পৌর মেয়র আবদুস ছালাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমানের নাম উল্লেখ করে দুর্গাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জালাল উদ্দীন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উপজেলার বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহীনুর আলম শাহীন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় কলমাকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসলাম উদ্দিন ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল খালেকসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এ মামলার এজাহার ভুক্ত আসামি রানা মিয়া নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।
মামলার বিষয়ে জানতে বাদী শাহিনুর আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। সাবেক সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসলাম উদ্দিনের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এসব নেতা আত্মগোপনে আছেন।
নেত্রকোনার জেলা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৮টি থানায় ১৪টি মামলা হয়েছে। মামলা হওয়ার পর থেকেই আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।