জামায়াতের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ সাড়ে ১৫ বছর শাসনই করে নাই, বাংলাদেশকে শশ্মানে পরিণত করেছে। তারা মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বিচার বিভাগকে তছনছ করেছে। আর্মি অফিসার, জামায়াতে ইসলামীর নেতা, তরুণ-যুবকদের খুন-গুম করেছে। দেশের ব্যাংকের টাকা হজম করেছে, বিদেশে টাকা পাচার করেছে।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে রংপুর সদর উপজেলার পাগলাপীরে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ মেকানিজম করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসে বিডিআরের পিলখানায় ৫৭ জন সেনা অফিসার ও তাদের পরিবারকে হত্যা করেছে। পিলখানার চারদিকের কারেন্ট বন্ধ করে দিয়ে খুনিদের পালানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। বিডিআরের সাড়ে ১৭ হাজার সদস্যকে জেলে নিয়েছে, চাকুরীচ্যুত করেছে। জেলের ভেতরে সাড়ে ৩’শ জনের অধিক অফিসার ও সৈনিক মারা গেছে।
তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের কাছে দুটি দেশ প্রেমিক শক্তি রয়েছে। একটি হলো সেনাবাহিনী ও অপরটি জামায়াতে ইসলামী। আগে সেনাবাহিনীকে শেষ করেছে তারা। জামায়াতে ইসলামীকে তছনছ করে দিতে পারলে তারা যা ইচ্ছে তাই করতে পারবে ভেবেছিল। তারা জমিদার হয়ে ক্ষমতায় বসে দেশের মানুষকে ভাড়াটিয়া বানাতে চেয়েছিল। মালিক বাড়ি ছেড়ে পালায় না। ভাড়া দিতে না পারলে ভাড়াটিয়া পালিয়ে যায়। এখন ভাড়াটিয়া পালিয়ে গেছে। এরপরেও তারা দেশের মানুষকে শান্তি দিচ্ছে না, ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। সকল ধরনের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে আজ দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে স্বাধীন দেশের মানুষের মর্যাদা, অধিকার, শিক্ষা ব্যবস্থা, অর্থনীতি মজবুত হওয়ার কথা ছিল, তা না করে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে জাতিকে মুখোমুখি করেছিল। স্বাধীনতার পক্ষে শ্লোগান দিয়ে তারা মানুষকে শোষণ করেছিল। দেশকে অন্যের হাতে ইজারা দিয়ে রেখেছিল। এই দেশে চারটি ধর্মের মানুষের হিংসা বিদ্বেষ নাই বললেই চলে। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষ ভাগাভাগিসহ ধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু করে মানুষকে ভাগ করে দিয়েছিলো।
ডাঃ শফিকুর রহমান বলেন, যাদেরকে সংখ্যালঘু বলে আওয়ামী লীগ মায়া কান্না করে, তারাই তাদের জমি অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছিল। তাদের সম্পদ ও ইজ্জতের উপর তারা হাত দিয়েছিল। অথচ তারা মায়া কান্না করে দোষ চাপায় দেশ প্রেমিক মানুষ ও নিষ্ঠাবান মুসলমানের উপর।
তিনি বলেন, এ জাতি আল্লাহ ছাড়া কারো গোলাম হবে না। কারো কাছে মাথা নত করবে না। আমাদের বীর সন্তানেরা লড়তে শিখিয়েছে, মরতে শিখিয়েছে। ৫ই আগস্ট সারাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। রংপুরের আবু সাঈদ প্রাণ দিয়ে মুক্তির ঘন্টা বাজিয়েছিল। আমি আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যসহ রংপুরবাসীকে সেলুট জানাই।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামের অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলায় জেলে রাখা হয়েছে। আমাদের অনেক নেতাকে বিচারিক হত্যাকান্ড করে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে। আমরা আদালত থেকে যদি নূন্যতম সুবিচার পাই তবে আপনাদের সন্তান আপনাদের বুকে সগর্বে ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, এ দেশ এমনভাবে চলতে পারে না। শৃঙ্খলা আনার জন্য আল্লাহর আইন ও বাস্তবায়নের জন্য সৎ লোক প্রয়োজন। যে দলের সৎ লোক আল্লাহর আইন দিয়ে সমাজ পরিচালিত করতে পারবে মানুষ তাদের পাশে থাকবে। আমরা কথা দিচ্ছি চাঁদাবাজি, দূর্নীতি, দখল বাণিজ্য, ঘুষ নেই নাই, নিচ্ছি না, আগামীতেও নিবো না। সেই সাথে কাউকে এসব করতেও দিবো না। আমরা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা গড়তে চাই যেখানে দ্বীনি ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া হবে। একজন শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট পাওয়ার পর চাকুরীর জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরতে হবে না।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাহবুবুর রহমান বেলালসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দরা।