ময়মনসিংহ নগরে প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহর (রহ.) মাজারের সামা কাওয়ালি অনুষ্ঠানে হামলা ও মাজার ভাঙচুরের ঘটনায় কোতয়ালী থানায় মামলা হয়েছে। মাজারের অর্থ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান অজ্ঞাতনামা দেড় হাজার জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, পাঞ্জাবি–পাজামা ও টুপি পরা দুই শতাধিক মানুষ মাজারের অনুষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। এ সময় মঞ্চ ও শতাধিক চেয়ার এবং সাউন্ড সিস্টেম ভাঙচুর করা হয়। পরে জানা যায়, অভিযুক্তরা ময়মনসিংহ শহরের বড় মসজিদ জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহ.) মাদরাসার শিক্ষার্থী।মামলার বাদী খলিলুর রহমান বলেন, ‘শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহের মাজারের ১৭৯তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে মিলাদ ও গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিন-চারটি গান হওয়ার পরই হঠাৎ থানার ওসি সাহেব এসে লোকজনকে দ্রুত সরে যেতে বলেন। এর মধ্যে বড় মসজিদ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এসে হামলা চালিয়ে সব তছনছ করে ফেলে। পরে গভীর রাতে মাজারটিও গুঁড়িয়ে দেয় তাঁরা। আমি এদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’সংস্কৃতিকর্মী, শিল্পী ও সংগীত শিক্ষক মো. মামুনুল ইসলাম বলেন, ‘ময়মনসিংহে আমরা সম্প্রীতি বজায় রেখে চলার সংস্কৃতি তৈরি করেছি বহু যুগ ধরেই। একই ধর্মের অভ্যন্তরীণ মতানৈক্য অথবা ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম নিয়ে একসঙ্গে মিলেমিশে থাকাই ধর্মের সুন্দর। যাদের উগ্র আচরণের ফলে মাজার ভাঙার মতো ঘটনা হয়েছে সেই অজ্ঞাতনামা দোষী ব্যক্তিদের নামে একটি মামলা হয়েছে থানায়, এটা ভালো লক্ষণ। কিন্তু এর বিচারও হওয়া উচিৎ দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে। ধর্মকে আশ্রয় করে বা যে কোনো মতকে উপজীব্য করে কেউ অন্যায় করলে দেশের আইনের শাসন কার্যকর করা জরুরি। মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হলে এবং মানবিক সম্প্রীতির বাংলাদেশ গঠন করতে চাইলে এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সকল মানুষ তাদের স্ব স্ব চিন্তাধারায় স্বাধীনভাবে সম্প্রীতি বজায় রেখে চলুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। যে মাজারটি ভাঙা হয়েছে প্রশাসনিক উদ্যোগে এর অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ করে ভবিষ্যতে যাতে কোথাও এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।’ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘কালু শাহের মাজার ভাংচুরের ঘটনায় খলিলুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার পাঁচশত জনকে আসামি করে মামলা করেছে। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়নি। এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। তবে আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’উল্লেখ্য, নগরীর কোতোয়ালি মডেল থানার বিপরীত দিকে অবস্থিত হজরত শাহ সুফী সৈয়দ কালু শাহের (রহ.) মাজারে ১৭৯তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে গত বুধবার রাতে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে সামা কাওয়ালি গানের আয়োজন করে ভক্তরা। রাত ১১টার দিকে গানের অনুষ্ঠান শুরুর একপর্যায়ে মাথায় টুপি পরা শত শত লোক অনুষ্ঠানে এসে হামলা চালিয়ে মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করে চলে যায় তারা। পরবর্তীতে দিনগত রাত ৩টার দিকে হামলা হয় মাজারে। মাজারের পাকা স্থাপনার বেশ কিছু অংশ ও ভেতরে থাকা জিনিসপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।’