• ঢাকা, বাংলাদেশ রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
  • [কনভাটার]
সর্বশেষ খবর
নেত্রকোনায় কাভার্ডভ্যান-সিএনজি সংঘর্ষ, নিহত ১ নওগাঁয় সড়কে ঝরলো শিক্ষক সহ দু’ জনের প্রাণ, শিশুসহ ৬ জন আহত কলমাকান্দায় ৩০ বোতল ভারতীয় মদসহ এক ব্যক্তি আটক। ৩১ দফা বাস্তবায়নই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ — বেলাল ই বাকী ইদ্রিশী পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ৫৪ বছরের কলঙ্কমুক্ত হবে দেশ: জামায়াত নেতা ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের রাণীনগরে ট্রেনে কাটা পড়ে বৃদ্ধের মৃত্যু নওগাঁয় আত্রাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে দুই শতাধিক পরিবার পানিবন্দী নওগাঁয় ট্রেনের নিচে কাটাপড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু বাহুবলে সড়ক পাকাকরণ কাজের উদ্বোধন করলেন এমপি প্রার্থী মখলিছুর রহমান ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ত্রাণপ্রত্যাশীসহ নিহত ১ হাজার ৭৬০ জাতিসংঘ
বিশেষ খবর
কলমাকান্দা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন ফিল্মি স্টাইলে শিক্ষককে তুলে নিয়ে মাথা ফাটাল ছাত্রদল” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সাংবাদিক সম্মেলন  অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাভোগীদের বিএনপিতে স্থান হবে না আনিসুজ্জামান বাবু নেত্রকোনায় জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার দাবিতে মানব-বন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আ.লীগের নিবন্ধন থাকবে কিনা, যা বললেন সিইসি নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের পেশাদারত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে : সিইসি সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কাজ করছে ইসি: সিইসি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১০ বছর পর সম্মেলন ঘিরে বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি ষড়যন্ত্র রুখে ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচন আদায় করতে হবে: রুমিন ফারহানা
নিজস্ব প্রতিবেদক / ৭৭ জন দেখেছেন
আপডেটঃ শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫

বাতিল হচ্ছে শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইনের সংশোধিত খসড়ায় এসব নেতাদের পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য) হিসেবে নির্বাচিত এই নেতারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭২ সালে গণপরিষদ গঠিত হলে তাদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়। তবে নতুন খসড়া আইনে তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৯৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম সংশ্লিষ্ট খসড়ায় স্বাক্ষর করেন। সংশোধনীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি আরও চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এই চার শ্রেণির মধ্যে রয়েছে—

১. মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসে পেশাজীবী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রচার চালানো ও বিশ্বজনমত গঠনে ভূমিকা রাখা ব্যক্তিরা।
২. মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা, কর্মচারী, দূত ও অন্যান্য সহযোগী।

৩. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, কলাকুশলী ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সাংবাদিকরা।
৪. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা।

এই খসড়া কার্যকর হলে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধা তালিকার অন্তত ১০ হাজার ব্যক্তির পরিচয় বদলাতে হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। যারা এতদিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছিলেন, তাদের নতুনভাবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তারাই থাকবেন, যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। রাজনীতিবিদরা সরাসরি যুদ্ধ করেননি, তাই তাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করে নতুন পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে কোনো মর্যাদা কমানো হয়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আরও সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে।’

তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘আইন বদলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পরিবর্তন করা যায় না। এটি অপ্রয়োজনীয় এবং অপচয়মূলক উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারীদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। যদি কেউ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ, কেবল সামরিক যুদ্ধ নয়। এ লড়াইয়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঢালাওভাবে এমএনএ, এমপিএ ও গণপরিষদ সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বাতিল করা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।’

খসড়া আইনে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই বীর মুক্তিযোদ্ধা।’

সংশোধনীতে রাজনীতিবিদদের নাম বাদ দেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, সাংবাদিক, চিকিৎসক ও নার্সদের মুক্তিযোদ্ধার পরিবর্তে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে সীমান্তবর্তী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক ও নার্সদের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, যা ইতিহাসকে বিকৃত করার শামিল। মুক্তিযুদ্ধ একটি পরিকল্পিত সংগ্রাম ছিল, যেখানে রাজনীতিবিদরাই মূল নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব বলেন, ‘এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমানজনক সিদ্ধান্ত। মুক্তিযুদ্ধ জাতির ইতিহাসের মীমাংসিত অধ্যায়। এটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা অযৌক্তিক।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার। আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন যাচাই-বাছাই

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা পুনরায় যাচাই-বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এখন শুধু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের মাধ্যমে অনেকের স্বীকৃতি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইন চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে। এটি কার্যকর হলে বেসামরিক গেজেটে অন্তর্ভুক্ত প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্যেও অনেকের স্বীকৃতি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমান আইনে মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছিল, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতার জন্য যে লড়াই হয়েছে, তা মুক্তিযুদ্ধ। এতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণায় সাড়া দিয়ে যারা অংশ নিয়েছেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা।’

কিন্তু নতুন খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা।’

এই পরিবর্তনের ফলে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। এরপর এটি অধ্যাদেশ আকারে প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

এই নতুন খসড়া আইনের ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি ও মর্যাদা সংক্রান্ত ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি বাস্তবায়িত হলে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিষয়ের আরও খবর
August 2025
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

Categories