
রিয়াদ হাওলাদার, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) :
লক্ষ্মীপুর জেলার সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ ও কমলনগর উপজেলায় সুপারি চাষ সর্বাধিক। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বীজ রোপণ করা হয়, এবং গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা যায় প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর পর।গাছ একবার ফল দিতে শুরু করলে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। প্রতি একর জমিতে ১৫০-২০০টি সুপারি গাছ রোপণ করা যায়। গড়ে প্রতি গাছ থেকে বছরে ১০০০-১৫০০টি সুপারি পাওয়া যায়। এ হিসেব অনুযায়ী, একটি একর জমি থেকেই বছরে লক্ষাধিক টাকার সুপারি বিক্রি করা সম্ভব।চাষিদের ভাষ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থাকলেও লক্ষ্মীপুরের মাটি ও আবহাওয়া এখনও সুপারি চাষের জন্য উপযোগী। জৈব সার ও পরিবেশবান্ধব পরিচর্যার মাধ্যমে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।সুপারি গাছ রোপণের পর শুরু হয় যত্নের দীর্ঘ অধ্যায়। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, গাছের গোড়ায় সার দেওয়া, পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা এই পরিচর্যার অংশ।সুপারি সংগ্রহের সময় শ্রমিকদের অত্যন্ত সাবধানে গাছে উঠতে হয়। একেকটি সুপারি নামাতে গিয়ে জীবন ঝুঁকির কথাও শোনা যায়। এ ছাড়া, সংগ্রহের পর শুরু হয় ধোয়া, স্লাইস করা, রোদে শুকানো, এবং বাজারজাত করার জটিল প্রক্রিয়া।বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে লক্ষ্মীপুরের সুপারির চাহিদা ব্যাপক। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে লক্ষ্মীপুরের সুপারিই সবচেয়ে বেশি সরবরাহ হয়। প্রতি কেজি সুপারি বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকা দরে, আর প্রক্রিয়াজাতকৃত পণ্য বিক্রি হয় আরও বেশি দামে।একই সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা, আসাম এবং মধ্যপ্রদেশেও লক্ষ্মীপুরের শুকনো সুপারি চোরাপথে প্রবেশ করে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। সরকারিভাবে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে।সুপারি শিল্প শুধু কৃষক নয়, নারীদের জন্যও সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। লক্ষ্মীপুর ও রায়পুরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ঘরোয়া কারখানা, যেখানে নারীরা সুপারি কেটে, শুকিয়ে এবং বস্তায় ভরে বাজারজাত করছেন।স্থানীয় কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রতি বছর প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার সুপারি বাণিজ্য হয়, যার মধ্যে ৪০ শতাংশই আসে রপ্তানিযোগ্য প্রক্রিয়াজাত সুপারি থেকে।