বদরগন্জ ও রংপুর সংবাদদাতা >>
রংপুরে পান চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক ব্যবসা হয়ে উঠেছে। পান চাষে খরচ কম ও আয় বেশি হওয়ায় অনেকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখন পান বরজের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়েছে। রংপুর সদরের হরিদেবপুর, মমিনপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায় নতুন-পুরনো মিলিয়ে প্রায় ২ হাজার বরজ রয়েছে। সদর ছাড়াও পীরগঞ্জ এবং মিঠাপুকুর উপজেলায় স্বল্প পরিসরে পান আবাদ হচ্ছে।অধিকাংশ বরজের আয়তন ৬ থেকে ২৫ শতকের মধ্যে। ২৫ শতকের ঊর্ধ্বেও কিছু বরজ রয়েছে। স্থানীয় পানচাষীরা জানান, তারা সাধারণত ফাল্গুন ও চৈত্রে চারা রোপণ করেন। আলু আবাদের মতো বেড তৈরি করে চারা লাগান। ছয় মাসের মধ্যে গাছগুলো গড় ৫ হাত লম্বা হয়। ওই সময় গাছ থেকে পান পাতা সংগ্রহ শুরু করেন। পানের রোগবালাই কম তবে বর্ষাকালে গাছের গোড়ায় পানি জমলে গোড়া পচে যায়। আবার অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় পান পাতা কুঁকড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গাছ মারা না গেলে একটি গাছ থেকে ২০ বছর পান পাওয়া যায়।সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর সদর উপজেলার কিশামত হরকলি, পূর্ব রথিরামপুর, কূশা বলরামপুর এলাকায়ও পানের অনেক বড় বড় বরজ গড়ে উঠেছে। বরজগুলোর বয়স এক থেকে তিন বছর। দেশী জাতের পান চাষ হচ্ছে।হরিদেবপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার কৃষক দীলিপ কুমার জানান, তিনি ১৪ শতাংশ জায়গার ওপর পানের একটি বরজ করেছেন। বরজে দেশী জাতের পান লাগিয়েছেন। প্রায় ৬৫ হাজার গাছ রয়েছে। তিনি আরো জানান, স্থানীয় কৃষি বিভাগে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা বা পরিদর্শক তাদের বরজ পরিদর্শনে আসেন না। প্রয়োজনীয় পরামর্শও পান না। ফলে টেকসই ও উন্নত পদ্ধতিতে পান চাষের কোনো নিয়ম তাদের জানা নেই। তারা প্রাচীন বা সনাতন পদ্ধতিতে পান চাষ করেন।রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, রংপুরে ২০২৩-২৪অর্থবছরে পান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৮ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩৬ হেক্টর ও উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ টন। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ১০ দশমিক ৫ টন। রংপুরের উপজেলাগুলোর মধ্যে তারাগঞ্জ, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া ও সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পান চাষ হয়।তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় ফসলের মাঠজুড়ে পানের বরজ রয়েছে, নারী-পুরুষ সমান তালে পান ছিঁড়ছেন এবং পরিচর্যা করছেন। তারাগঞ্জের কুশা ইউনিয়নের পানচাষি কমল কুমার দাস বলেন, ‘পান চাষ করে আমাদের কষ্ট দূর হয়ে গেছে।’ পীরগঞ্জ উপজেলার রাইপুর ইউনিয়নের পানচাষি চঞ্চল কুমার জানান, পানগাছ পরিচর্যা করতে বাড়ির সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, ‘পান বারোমাসি ফসল।একবার চাষ করলে এক যুগ টানা পানপাতা বিক্রি করা যায়। খালি পরিচর্যা আর বরজ মেরামত করলেই হয়। পান চাষ লাভজনক, খরচ খুব কম।’ মিঠাপুকুর উপজেলার ১০ নম্বর বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের জয়নাল বলেন, ‘৪৫ শতক জমিতে বছরে দুবার ধান চাষ করে খরচ বাদে ১৫-১৭ হাজার টাকা আয় করা যায়। কিন্তু ৪৫ শতক জমিতে পান চাষ করতে খরচ হয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। প্রতি ৩ মাস পরপর পান তোলা হয়। পান তোলার পর সেচ, সার ও বরজ মেরামত বাবদ ২৮-৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু ৪৫ শতক জমির পান বিক্রি করে খরচ বাদে ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বছরে আয় হয়।চাষি উত্তম কুমার বলেন, ‘বাবা কষ্ট করে সংসার চালাতেন। কিন্তু এখন পান চাষ করে আমার আর অভাব নেই।’ তারাগঞ্জের কুর্শা ইউনিয়নের গোপাল চন্দ্র বলেন, ‘অভাবের সংসারে পড়াশোনা হয়নি। আমি অন্যের জমিতে কামলা দিতাম। এতে কোনমতে সংসার চলত। এখন পান চাষ করি, সংসারের অভাব ঘুচেছে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থকরী ফসল পান। দেশে পানের চাহিদা ও বাজার দুটোই ভালো। অন্য ফসলের তুলনায় পান চাষ লাভজনক একটি ফসল।