বদরগঞ্জ (রংপুর)প্রতিনিধি:
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের এক দিনমজুর হিন্দু পরিবারের বসতবাড়ির জায়গা জোর করে দখলে নিয়ে দেশ ছাড়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।শুধু তাই নয়, ওই বসতভিটা বিএনপি নেতাকে লিখে না দিলে হিন্দু পরিবারটিকে হত্যা করে লাশ গুম করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।এ ঘটনায় ক্রয় সূত্রে জমির মালিক ভাদু চন্দ্র রায় গত বৃহস্পতিবার ওই বিএনপি নেতা ও তার ভাইসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে বদরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।বসতবাড়ি দখলকারী ওই বিএনপি নেতার নাম সেলিম মিয়া (৪০) তিনি উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সিনিয়র সহসভাপতি।থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা দামোদরপুর ইউনিয়নের শেখেরহাট ব্যাংডুবি গ্রামের গনেশ চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে এক মাস আগে ১২ শতক বসতবাড়ি দলিল মুল্যে কিনে নেন ভাতিজা ভাদু চন্দ্র রায় । এরপর তিনি ওই ১২ শকতের মধ্যে ছয় শতকে বসবাস শুরু করেন। বাকি ছয় শতক বাড়ির উঠান হওয়ায় সেটি গত বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতা সেলিম দলবল নিয়ে বাঁশের বেড়া দিয়ে দখলে নেন। ওই ছয় শতকে বেড়া দেওয়ার কারণে তাদের চলাচলের বাড়ির এক মাত্র দরজাটি বন্ধ হয়ে যায়।ভাদু চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, ‘ওই ছয়শতক জমি দখলে নেওয়ার পর বিএনপি নেতা আমাদেরকে বাড়িটিও ছেড়ে দিতে হুমকি দিয়েছেন। তা নাহলে আমাদেরকে দেশ ছেড়ে যেতে বলেছেন। যদি বিএনপি নেতা কে বসতবাড়ি লিখে না দেই তাহলে তিনি আমাদের মেরে লাশ গুম করার হুমকি দিচ্ছেন।’এছাড়াও ভাদু চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, ‘থানায় ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টা ওই বিএনপি নেতার সঙ্গে আপোষ করতে বলছে। আপোষের জন্য থানাতেও পুলিশ আমাদেরকে ডাকছিল, কিন্তু আমরা যায়নি।’তাঁর স্ত্রী রীতি রানী বলেন, ‘আমাদের আগে থাকার জায়গা ছিল না। দুই শতকের একটি নিচু জায়গায় কষ্ট করে ছিলাম। একটু বৃষ্টি হলেই বাড়িতে পানি উঠতো।’ তিনি বলেন, ‘আমার ও আমার মেয়ে গহনা, হাঁস মুরগী ও গরু ছাগল বিক্রি করে আমার চাচা শ্বশুরের কাছ থেকে ১২ শতক বসতবাড়ি লিখে নিয়ে বসবাস শুরু করেছি। কিন্তু আমরা জমি কেনার পর জানতে পারি এই জমিটি নাকি বিএনপি নেতা কিনতে চেয়েছিলেন। ওই নেতা জমি কিনতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।’ রীতি রানী আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘বিএনপি নেতা সেলিম বসতবাড়িটি আমাদের কাছ থেকে লিখে নিতে চাপ দেন। না দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে দলবল নিয়ে বাঁশের বেড়া দেন এবং প্রকাশে হুমকি দিয়েছেন দেশ ছাড়ার। আমাদের কী অপরাধ, আমরা কী ন্যায় বিচার পাবো না?বসতবাড়িতে বেড়া দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করলেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন বিএনপি নেতা সেলিম মিয়া। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ওই জমি ঘেষে আমার বাড়ি। আমার সেখানে দুই শতক জায়গার খুব প্রয়োজন। ভাদু চন্দ্র জমিটি কেনার আগে আমার সঙ্গে কথা হয়েছিল গনেশ চন্দ্রের। এ জন্য আমার কাছ থেকে তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা বায়না নেন গনেশ। কিন্তু সেই জায়গা আমাকে না দিয়ে গোপনে ভাদু চন্দ্রকে দলিল করে দেন।’ তবে গনেশকে তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা বায়না দেওয়ার কোনো কাগজপত্র প্রতিবেদককে দেখাতে পারেননি ওই নেতা।জানা গেছে, গনেশ ওই জমি বিক্রি করে মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে উঠেছেন। তবে গনেশ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে জমি বিক্রির জন্য বায়না নেইনি। ভাতিজার থাকার জায়গা না থাকায় তাঁকে জমিটি লিখে দিয়েছি।’এ বিষয়ে বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র আহবায়ক পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, ‘ওই বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে হিন্দু পরিবারের জায়গা দখলের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি দেখার জন্য ওই ইউনিয়নের বিএনপি নেতাদের বলেছিলাম। কিন্তু তাঁরা বিষয়টি সমাধন করে দিতে পারেনি। তবে হিন্দু পরিবারের জায়গাটি এভাবে দখলে নেওয়া ঠিক করেনি বিএনপি নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ওসিকে বলা হয়েছে।’ এ দিকে দলের ভাবমুর্তি নষ্টের জন্য ওই নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রক্রিয়া চলছে বলে মন্তব্য করেন পরিতোষ চক্রবর্তী।গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা দু’পক্ষের দু’টি অভিযোগ পেয়েছি। দুই পক্ষ কে থানায় ডাকা হয়েছে। ওই ঘটনায় তদন্ত চলছে। আজকেও সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।