পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়। তারা জানায়, মৌসুম অনুযায়ী প্রতি বছর আমন, বোরো ধানের জন্য জমি প্রস্তুত, আবাদ, কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, সবজি চাষ, দৈনন্দিন কাজসহ অন্যান্য কাজ পূর্ব থেকেই কৃষি শ্রমিকের দ্বারা করানো হয়ে আসছে। তবে, ধান লাগানো ও কাটার সময় প্রচুর শ্রমিকের চাহিদা ছিল। ওই সময় স্থানীয় শ্রমিকের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেই ও লোকজন আসতেন। অনেকের বাড়িতে বছর চুক্তিতে লোকজন কাজ করতেন। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। ধান কাটা মাড়াই আবাদ মেশিন নির্ভর হয়ে উঠছে। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে কৃষি শ্রমিকের চাহিদা ও কমে যেতে শুরু করে। এ অবস্থার ফলে জীবন বাঁচাতে পেশা বদল শুরু করে কৃষি শ্রমিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নানা পেশায় যুক্ত হচ্ছেন কৃষি শ্রমিকরা। এর মধ্যে অনেকেই বিদেশ ও চলে যাচ্ছেন। বিদেশে বেশি অর্থ ও চাহিদার কারণে এই পথে ঝুঁকছেন কৃষি শ্রমিকরা।
কৃষক আব্দুর রহিম জানান, তিনি পারিবারিকভাবেই একজন গেরস্ত। তার বাবার দেওয়া প্রায় ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। ওই সব জমিতে মৌসুম অনুযায়ী ধান আবাদ করে থাকেন। তার বাবা থাকতে বাড়িতে সব সময় কাজের লোক ছিল। ধান আবাদ ও লাগানোর সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে ও কাজের শ্রমিক আনা হতো। বাড়িও জমজমাট ছিল। কিন্তু এখন সেগুলো আর চোখে পড়ে না। এ মৌসুমে শ্রমিক সংকটে ধান আবাদ অনেক দেরি হয়েছে। এখন ধান কাটা শুরু হওয়ায় শ্রমিক সংকট থাকলেও বেশিরভাগ জমির ধান প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মেশিনের সাহায্যে কাটা ও মাড়াই কাজ করা হয়েছে। এতে তার পরিশ্রম, সময় ও খরচ অনেক কমেছে।
পৌর শহরের শামসুল ইসলাম জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই তারা শ্রমিক দিয়ে জমি চাষাবাদ করছেন। এক সময় তার বাড়িতে নিয়মিত কৃষি শ্রমিক থাকতো। গত কয়েক বছর ধরে এলাকায় আগের মতো কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ মৌসুমে কষ্ট করে ১৫ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করেন। এখন পাকাধান মেশিনের সাহায্যে কাটছেন। এতে করে তার সময় কম লাগছে দ্রুত কেটে মাড়াই ও রোদে শুকিয়ে ঘরে তোলতে পারছেন। প্রযুক্তির সুবিধার কারণে কৃষি কাজ সহজ হচ্ছে।
কৃষি শ্রমিক মহসিন মিয়া জানান পরিবারে স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। এখানে প্রায় ২০ বছর ধরে কৃষি শ্রমিকের কাজ করছেন। গত কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কাজ কমে আসায় তার সংসার চলছে না। নিরুপায় হয়ে তিনি সিএনজি অটোরিকশা চালান। প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ টাকা আয় করছেন। সেই আয় দিয়েই চলে সংসার।
বাবুল মিয়া বলেন, আগে মানুষের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করা হতো। আমন ও বোরো মৌসুমে কাজের চাপ ছিল বেশি। এখন প্রযুক্তির সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের চাহিদা কমেছে। বেশিরভাগ সময় বসে থাকতে হয়। তাই পরিবারের কথা চিন্তা করে কৃষি শ্রমিকের কাজ ছেড়ে এখন শহরে ক্ষুদ্র ব্যবসা করছি। দৈনিক এখন ৫০০ টাকার উপর আয় হচ্ছে।
মজিদ মিয়া জানান তারা ৩ ভাই ১ বোন। বাবার সঙ্গে ছোট বেলা থেকেই ধান লাগানো, কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, মাটি কাটাসহ নানা প্রকারের কৃষি কাজ করতেন। এই কাজেই চলতো তাদের সংসার। গত কয়েক বছর ধরে কাজের চাহিদা কমে আসায় সব সময় কাজ থাকতো না। তাই বাধ্য হয়ে পেশা বদলাতে হয়েছে। এরই মধ্যে আত্মীয়র সহযোগিতা আর ধার দেনা করে এক ভাইকে প্রবাসে পাঠানো হয়েছে। তার বাবা করছে শহরে ক্ষুদ্র ব্যবসা। এই কাজে সহযোগিতা করছেন তার ছোট ভাই। এখন পরিবারে কোনো অভাব অনটন নেই।