ফলনশীল (হাইব্রিড) ব্রি-ধান আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধানের আবাদে ফলন ভালো হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় কৃষকদের মাঝে দিনদিন আগ্রহ বাড়ছে।
এদিকে প্রচলিত ধান আবাদ করে কৃষকরা যখন লাভের মুখ দেখতে পারছে না তখন উচ্চ ফলনশীন ধান যেন কৃষকদেরকে আশার আলো দেখাচ্ছে। প্রচলিত ধান আবাদ করে বিঘা প্রতি যেখানে ১৪ থেকে ১৫ মণ ফলন পেতো, এখন উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদে পাচ্ছেন ২২ থেকে ২৫ মণের উপর ধান। এ ধান আবাদ করায় কৃষকরা এখন অনেক লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় বোরো চাষ আবাদে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে উন্নত ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করেন। যা গত বছরের থেকে ১৫০ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়। উচ্চ ফলনশীলের জাতের মধ্যে ব্রি-৭৫, ৮৪, ৮১, ৬৩,৮৮, ৯৬, সুবর্ণ, হীরা জাগরনীসহ নানা প্রজাতির ধান রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানায়, ওইসব ধান মানুষের শারীরিক ঘটতি পূরণে যেমন সহায়ক তেমনি অধিক ফলন নিশ্চিত করে বিধায় কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এই ধান মানুষের জিঙ্ক ও প্রোটিন ঘাটতি মোকাবিলা এবং কৃষকদের অর্থনৈতিক সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বেশ সহায়ক হচ্ছে।
এদিকে উপজেলার সর্বত্র ধান কাটা শুরু হওয়ায় কৃষকরা এখন কাটা, মাড়াই আর রোদে শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি বসে নেই কৃষানীরা। তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে সাহায্য করছেন। চলতি মৌসুমে এ উপজেলার কৃষকরা রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হালচাষ দিয়ে ইরি-বোরো ধান আবাদ করেন। শুরু থেকেই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ফলে কৃষকরা জমিতে সঠিক সময় পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের সব রকম পরামর্শ প্রদান, পর্যাপ্ত সার পাওয়ায় এবার কোনো কিছুতেই কৃষকদের বেগ পেতে হয়নি। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সর্বত্রই বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
সরেজমিনে পৌর এলাকায় তরাগন, দেবগ্রাম, নারায়নপুর, উপজেলার নুরপুর, হীরাপুর, উমেদপুর, সাতপাড়া, ধাতুরপহেলা, তুলাবাড়ি, কুসুমবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কৃষকরা বোরো ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পৌর এলাকার কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, এ মৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করেছেন তিনি। এরমধ্যে তার ৫ বিঘা জমিতে রয়েছে উচ্চ ফলনশীল ধান। গত ৩ দিন আগে তার ধান কাটা শেষ হয়। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল ধানে প্রতি বিঘায় তিনি ২৩-২৫ মণ ধান পেয়েছেন। তবে দেশীয় ধানে সব মিলিয়ে ফলন পেয়েছেন প্রতি বিঘায় ১৪ মণ। উচ্চ ফলনশীলে লাভবান হলেও দেশীয় ধানে তার লোকসান গুনতে হবে।
কৃষক মো. মজনু মিয়া জানান, দেশীয় জাতের ধানে ফলন ভালো না হওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে গত ২ বছর ধরে তিনি জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করছেন।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, মৌসুমের শুরুতে সরকারিভাবে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় এ উপজেলায় ৩ হাজারের বেশি কৃষককে পাঁচ কেজি করে উফসী ধানের বীজ, ১০ কেজি করে ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। এ উপজেলায় দিনদিন উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ গত কয়েক বছরের তুলনাই অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলন বৃদ্ধিতে মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ উপজেলার সর্বত্রই বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।