এ.এম.সারোয়ার জাহান/নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক, আকবর হোসেন পাঠান ফারুক আর বেঁচে নেই , ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন,গুণি এই অভিনেতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে শরৎ।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৮ টায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গত বছরের মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে যান বরেণ্য অভিনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক পরীক্ষায় তাঁর রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এর পর থেকেই
চিকিৎসকের পরামর্শে তখন দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। তখন থেকেই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন গুণি এই অভিনেতা সেখানে দুই বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
এই অভিনেতা ১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন, তার বাবার নাম আজগার হোসেন পাঠান। নায়কের শৈশব কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে রাজধানীর পুরান ঢাকায়। পাঁচ বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছোট।
আকবর হোসেন পাঠান স্কুল জীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে যোগ দেন এবং সে সময়ে তার নামে প্রায় ৩৭টি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্র অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিষেক হয় ফারুকের। ১৯৭৩ সালে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ দুটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি
১৯৭৬ সালে মুক্তি পায় তার অভিনীত ৩টি সিনেমা সূর্যগ্রহণ, মাটির মায়া ও নয়নমনি। আর এই চলচ্চিত্র ৩টি বিভিন্ন বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। পরের বছর শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত কালজয়ী উপন্যাস ‘সারেং বৌ’ অবলম্বনে নির্মিত ‘সারেং বৌ’ ও আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
এ চলচ্চিত্র দুটি নারীকেন্দ্রিক হলেও তার অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ১৯৭৯ সালে তার অভিনীত নাগরদোলা, দিন যায় কথা থাকে কথা দিলাম, মাটির পুতুল সাহেব, ছোট মা, এতিম, ঘরজামাই চলচ্চিত্রগুলো ব্যবসাসফল হয়।
১৯৮০ সালে ‘সখী তুমি কার’ ছায়াছবিতে শাবানার বিপরীতে শহুরে ধনী যুবকের চরিত্রে অভিনয় করে সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে মিয়া ভাই চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে মিয়া ভাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।
নায়ক ফারুক সুজন সখী নয়নমনি সারেং বৌ গোলাপী এখন ট্রেনে সাহেব ‘আলোর মিছিল দিন যায় কথা থাকে’সহ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত বেশির ভাগ চলচ্চিত্রই ব্যবসা সফল হয়। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৬ তাকে আজীবন সন্মাননা দেয়া হয়।
অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত ফারুক। চলচ্চিত্রের মানুষের কাছে তিনি সবার প্রিয় ‘মিঞা ভাই’।
১৯৮৭ সালে মিয়া ভাই চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে মিয়া ভাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২০১৬ সালে ভূষিত হন আজীবন সম্মাননায়।