রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি/
আগামী ২০ অক্টোবর, ২ কার্ত্তিক, শুক্রবার ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। এ উৎসবকে ঘিরে নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিন-রাত নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমাতে রঙের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেত্রকোনার মৃৎশিল্পীরা।
নেত্রকোনা সদরসহ কয়েকটি উপজেলার মণ্ডপগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মণ্ডপে মণ্ডপে মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমাতে রঙের কাজে ব্যস্ত সবাই। মাটি দিয়ে সুনিপুণ হাতে তৈরি করা কারুকার্যময় অলঙ্কারগুলোতে বিভিন্ন রঙের ছোঁয়ায় প্রতিমাগুলোকে সাজিয়ে তুলছেন অনন্যা রূপে। দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন দেবী দূর্গাসহ সকল প্রতিমাকে সকলের কাছে অপরূপ সাজে প্রদর্শন করার জন্য। শেষ মূহুর্তে প্রতিমা তৈরিতে কোন ধরনের ঘাটতি রাখতে চাইছেন না কারিগররা।
নেত্রকোনা জেলা পূজা উদযাপন কমিটির তথ্যমতে, এ বছর জেলা শহরসহ ১০টি উপজেলায়- ৫৬০টি মণ্ডপ ও মন্দিরে পূজা উদযাপিত হবে। নেত্রকোনা পৌরসভায়- ৫৬টি, সদর উপজেলায়- ৬৩টি, দুর্গাপুরে- ৬৬টি, কলমাকান্দায়- ৬০টি, বারহাট্টায়- ৫৫টি, কেন্দুয়ায়- ৫২টি, আটপাড়ায়- ৪২টি, মদনে – ১৬টি, মোহনগঞ্জে- ৪২টি, খালিয়াজুরিতে- ৪৪টি ও পূর্বধলায়- ৬৪টি পূজা মণ্ডপ সাজানোর কাজ চলছে।
স্থানীয় মৃৎশিল্পী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা এসে প্রতিমা তৈরি ও রং তুলির কাজ করছেন। অন্যদিকে প্রতিমার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ঠিক ও তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাক-ঢোল, কাঁশি ও বাঁশির কারিগররা।
হিন্দুশাস্ত্র মতে, গত ১৩ অক্টোবর শনিবার মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। আগামী ১৯ অক্টোবর মহা পঞ্চমী, ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী, ২১ অক্টোবর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহা অষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহা নবমী, ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
প্রতিমা শিল্পী সুদীপ্ত পাল বলেন, আমি দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় যাবত প্রতিমা তৈরি করে আসছি। এবার আমি ১২টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছি। তবে দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে রং, তুলি ও সাজসজ্জার দাম বেশি হওয়ায় এবং প্রতিমা তৈরির মজুরি কম পাওয়ায় কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে শিল্পীদের। তবে চলতি বছর প্রতিমার চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি।
নেত্রকোনা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিটন চন্দ্র পন্ডিত বলেন, জেলার ১০টি উপজেলার সব মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গোৎসবের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ চলছে। এরই মধ্যে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উৎসব নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. ফয়েজ আহমেদ বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তার জন্য কয়েক স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। নেত্রকোনা জেলায় প্রতি বছরের মতো এ বছরও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপিত হবে দুর্গাপূজা এমনটাই আশা করছেন নেত্রকোনা জেলাবাসীর