• ঢাকা, বাংলাদেশ সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন
  • [কনভাটার]

নওগাঁয় জাল দলিলে জমি খারিজ’ প্রতারক চক্রের ফাঁদে সর্বশান্ত হচ্ছে অনেকেই

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, নওগাঁ প্রতিনিধি/ / ১০০ জন দেখেছেন
আপডেটঃ শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৩

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, নওগাঁ প্রতিনিধি/

 

নওগাঁর রাণীনগরে জাল দলিল এর মাধ্যমে মিথ্যে তথ্য দিয়ে প্রায় ৮ শতাংশ জমি খারিজ (নামজারি) করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। খারিজ এর পর ঐ জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি একটি প্রতারক চক্রের মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে জাল দলিলের মাধ্যমে এই খারিজটি আব্দুল কুদ্দুসের নামে নামজারি করা হয়েছে। বর্তমানে ঐ জমি নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এই ঘটনায় জমির ওয়ারিশ ও ক্রয়সূত্রে ৫ জন মালিক এক যোগে আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে জাল দলিলের মাধ্যমে তথ্য গোপন করে এবং ভূয়া তথ্য দিয়ে জমি খারিজ করে নেওয়ার অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার ৯ নভেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। ডিজিটাল যুগের এমন ডিজিটাল জালিয়াতির ঘটনায় ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকান্ড নিয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও ভীতের সঞ্চার হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চককুতুব মৌজায় সফেজান বিবি এবং মছিরন বিবির নামে ১৮৪, ১৪২, ১৪৩ নম্বর আরএস খতিয়ান প্রস্তুত আছে। ঐ খতিয়ানের জমির ওয়ারিশ এবং দলিল মূলে জাছের আলী, আব্দুস সাত্তার, শাহাদ আলী সরদার, আহাদ আলী সরদার ও আজিজুল ইসলাম মালিক বলে দাবি করা হয়েছে। তারা সবাই বছরের পর বছর ঐ খতিয়ানের জমিগুলো ভোগ দখল করে আসছেন। এর মধ্যে সম্প্রতি ওইসব সম্পত্তির খাজনা-খারিজের জন্য সংশ্লিষ্ট তহসিল অফিসে গেলে মালিকরা জানতে পারেন তাদের জমির মধ্যে থেকে রাণীনগর-আত্রাই সড়ক সংলগ্ন প্রায় ৮শতাংশ জমি চককুতুর গ্রামের ময়েন উদ্দীন মন্ডলের ছেলে আব্দুল কুদ্দুসের নামে চলতি বছরের ৮ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে খারিজ (নামজারি) হয়।
এরপর আব্দুল কুদ্দুসের হওয়া খারিজের আবেদনের তথ্য সংগ্রহে নামে জমির মালিক দাবিদার পক্ষ। একপর্যায়ে তারা আব্দুল কুদ্দুসের ভূমি অফিসে দাখিল করা রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসের ১৯৮৮ সালের দলিল নম্বর ৬৮১৫ এবং ৬৩৬০ দলিল পান। এরপর কুদ্দুসের দাখিল করা দুই দলিলের জাবেদা কপি রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে তুলতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে এই জালিয়াতির চিত্র।
অভিযোগকারী জাছের আলীসহ অন্যরা জানান, আমরা রাণীনগর সাব-রেজিষ্ট্রী অফিস থেকে সম্প্রতি আব্দুল কুদ্দুসের ৬৮১৫ নম্বর দলিলের জাবেদা কপি (নকল) তুলে দেখি জাবেদার সাথে কুদ্দুসের দলিলের কোন মিল নেই। দলিলের দাতা, গ্রহীতা, মৌজা এমনকি জমিরও কোন মিল পাওয়া যায়নি। এছাড়া কুদ্দুসের ৬৩৬০নম্বর দলিল রেজিষ্ট্রী অফিসে পাওয়া যাচ্ছে না।
তারা আরো বলেন, একটি প্রতারক চক্রের মাধ্যমে আব্দুল কুদ্দুস জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আমাদের জমির খতিয়ানের দুই মালিক সফেজান বিবি এবং মছিরন বিবিকে দাতা বানিয়ে এবং কুদ্দুস নিজে গ্রহীতা সেজে দু’টি জাল দলিল তৈরি করেছেন। সেই দু’টি জাল দলিল দিয়ে ও তথ্য গোপন করে আমাদের প্রায় ৮ শতাংশ জমি কুদ্দুস ভূমি অফিস থেকে খারিজ করে নিয়েছেন।
এ ঘটনায় আমরা ঐ খারিজ বাতিলসহ কুদ্দুসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত আব্দুল কুদ্দুসের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, উপজেলার খাগড়া গ্রামের মৃত-মমিন সরদারের ছেলে ডিজিএফআই থেকে সদ্য অবসর নেয়া হাফিজুর রহমান হাফিজ সম্পর্কে আমার শালা (বউয়ের ভাই) হয়। শালা হাফিজ টাকার বিনিময়ে আমাকে এই কাজ করে দিয়েছে। এর চেয়ে আমি আর বেশিকিছু জানি না। কোথায় কি করতে হয়েছে তার সবকিছু শালা হাফিজ করেছে এবং সবকিছু সে জানে।
এই বিষয়ে হাফিজুর রহমান হাফিজ জানান, আব্দুল কুদ্দুস সম্পর্কে আমার ফুফাতো দুলাভাই। সেই সূত্রে ঐএলাকায় আমার যাওয়া-আসা। কুদ্দুস দুলাভাই আমার কাছে জমির খারিজ করার কাজে সহযোগিতা চেয়েছিলো বলেই আমি তাকে একটু সহযোগিতা করেছি মাত্র। আমার কোন চক্র নেই। আমি জমি সংক্রান্ত কোন বিষয়ই তেমন ভাবে জানি না। একটি কুচক্রী মহল আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় করার জন্য আমার বিষয়ে এমন মিথ্যে অভিযোগ তুলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, ডিজিএফআই-এর লোক বলে নিজেকে পরিচয় দানকারী হাফিজের বিরুদ্ধে জাল দলিলের মাধ্যমে জমি খারিজ করে দেয়ার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তার চক্রটি ভূমি অফিসের বিভিন্ন দালালদের সঙ্গে আতাত করে এই ধরণের জমির জালিয়াতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে অনেক মানুষকেই সর্বশান্ত করছেন। আর জমি সংক্রান্ত সমস্যাগুলো আরো দীর্ঘ হচ্ছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই- বাছাই করে আব্দুল কুদ্দুসের নামে ৭.৯৪ শতাংশ জমি নামজারি করা হয়েছে। তার দাখিল করা দলিল যে জাল সেটা আমাদের জানা ছিল না। ঐ জমির মালিক দাবি করে ৫ জন ব্যক্তি খারিজ বাতিলের জন্য আবেদন এবং জাল দলিল দিয়ে খারিজ করে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে জালিয়াতি প্রমান হলে খারিজ বাতিল সহ আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

মতামত লিখুন

এই বিষয়ের আরও খবর

এইমাত্র পাওয়া

No video found!

May 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

No video found!