মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের জয়নুল আবেদীন পার্কে মিশুক রিক্সা চালক হাসেম হত্যাকান্ড সংঘটনের ৩৬ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন লুন্ঠিত মিশুক রিক্সা উদ্ধার, ০৪ ঘাতকসহ গ্রেফতার ০৭ জন।
গত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ সকাল ০৮:০০ ঘটিকায় ময়মনসিংহ জেলার কোতোয়ালী মডেল থানাধীন জয়নুল আবেদীন পার্ক সংলগ্ন সিভিল সার্জনের বাসভবনের উত্তর পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের কিনারায় হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অজ্ঞাতনামা এ লাশটিকে তার আত্মীয়-স্বজনগণ সনাক্ত করেন।
নিহত হাসেম মিয়া [ দাপুনিয়া কলাপাড়ার ] জহির উদ্দিন ওরফে জহুর উদ্দিন এ পুত্র, যিনি পেশায় একজন মিশুক রিক্সাচালক, এ ঘটনায় নিহত হাসেম মিয়ার ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানায় এজাহার দায়ের করলে কোতোয়ালী মডেল থানার মামলা রুজু করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা এর দিকনির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ [ ওসি ] ফারুক হোসেন এর নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনায়নের নিমিত্তে মাঠে নামেন। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কোতোয়ালী ও গৌরীপুর থানা এলাকা হইতে উক্ত হত্যাকান্ডে ঘটনায় সরাসরি জড়িত ০১/ মোঃ আলমগীর (২০) ২। মোঃ রাকিবুল হাসান তপু (৩০), ৩। মোঃ রাকিব হাসান ওরফে রাকিবুল ইসলাম [ ২১], ৪/ মোঃ আরাফাত হোসেন বাবু [২৭] সহ মোট ০৪ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
আসামীদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডে ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত মর্মে জানান। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গত [০৮ ফেব্রুয়ারি ] তারিখ রাত ০৯.০০ ঘটিকার সময় ধৃত আলমগীর, রাকিবুল হাসান তপু, রাকিবুল, আরাফাত হোসেন বাবু ও পলাতক অপর একজন সহ মোট ০৫ জন একত্রে শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ স্মৃতিসৌধের মাঠে বসে একটি অটো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা মোতাবেক অনুমান রাত ১২.০০ ঘটিকার সময় তারা শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ হতে ভিকটিম হাসেমের মিশুক রিক্সা ভাড়া করে সার্কিট হাউজ মাঠে নিয়ে যায় যায়। তারপর সার্কিট হাউজ মাঠে দাঁড়িয়ে মিশুক রিক্সা চালক হাসেমের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে তারা এলোপাথাড়ি মারপিট করে বেড়িবাঁধের নিচে নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। ধৃত আলমগীরের কোমরে পরিহিত বেল্ট দিয়ে ধৃত রবিন ভিকটিমের পা বাঁধে এবং গেঞ্জি দিয়ে আরাফাত হোসেন বাবু ভিকটিমের হাত বাঁধে। আরাফাত হোসেন বাবু ভিকটিম হাসেমের পরিহিত চাদর দিয়ে তার মুখ বাঁধে এবং সবাই মিলে তাকে মাটিতে চেপে ধরে রাখে। এরপর আরাফাত হোসেন বাবুর পকেটে থাকা চাকু দিয়ে পলাতক রবিন ভিকটিমের বুকে ও পেটে একাধিক আঘাত করে এবং তাকে মাটিতে ফেলে রেখে সবাই ভিকটিমের মিশুক রিক্সাটি নিয়ে শম্ভুগঞ্জ ব্রীজ এলাকায় গিয়ে ধৃত আলমের কাছে নগদ ৩৪০০০, টাকায় বিক্রি করেন। পরে মিশুক বিক্রির টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এ ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত ০৪ জন সহ মিশুক ক্রয় বিক্রয়ের সাথে জড়িত আরো ০৩ জন, ফরহাদ [৩১], সুমন শেখ [৩৫] এবং আলম [৪০] সহ মোট ০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আসামী মোঃ আলমগীর এর বিরুদ্ধে ০১টি হত্যা মামলা, মোঃ রাকিবুল হাসান তপু [৩০]এর বিরুদ্ধে ০১টি হত্যা মামলা, মোঃ রাকিব হাসান ওরফে রাকিবুল ইসলাম [২১] এর বিরুদ্ধে ০১টি চুরি মামলা, মোঃ আরাফাত হোসেন বাবু [২৭] এর বিরুদ্ধে ০১টি হত্যা ও ০১ টি চুরি মামলা রয়েছে। উল্লেখ্য, রাকিবুল ইসলাম তপু চরপাড়া মেডিকেল এর সামনে সংঘটিত শরিফ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় আসামী ছিলেন। উক্ত মামলায় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছিলেন এবং ১৯ মাস জেলে থেকে গত ০২ মাস আগে জামিনে বের হন। পলাতক আসামী গ্রেফতারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।