• ঢাকা, বাংলাদেশ সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন
  • [কনভাটার]

সরিষার বাম্পার ফলনে, লাভে স্বপ্ন দেখছে কৃষকরা

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা জেলা প্রতিনিধি;  / ৯০ জন দেখেছেন
আপডেটঃ শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৪
সরিষার বাম্পার ফলনে, লাভে স্বপ্ন দেখছে কৃষকরা

 

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি

 

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বরাবরের তুলনায় নেত্রকোনায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে।  কৃষকরা বেশি করে সরিষা চাষ করেছে। সরিষার বাম্পার ফলনে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।

 

সরিষা চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগে আমরা স্থানীয় জাতের সরিষা চাষ করতাম তাই ফলন কম হতো এবং উৎপাদন সময়ও বেশি লাগত। এখন কম সময় ও কম খরচের মধ্যে সরিষা চাষ করা যায়। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো ধান আবাদ করা যায়। ফলে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে সরিষার আবাদ। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে লাভ বেশি পাওয়ায় দিন দিন আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। এতে করে আগের তুলনায় জমিতে সরিষা চাষ দিন দিন বাড়ছে। ভালো ফলনে খুশি সরিষা চাষিরা।

 

তারা আরও জানান, আমন ও বোরো ফসলের মাঝামাঝি সময়ে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ লাভজনক হওয়ায় সরিষার আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া সরিষা আবাদে সেচ ও সার খরচ কম হওয়ায় আবাদ কয়েকগুণ বেড়েছে। এছাড়াও কম জীবনকালের বারি-১৪ জাতের সরিষা ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টর জমিতে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি।

 

খালিয়াজুড়ি উপজেলার মেন্দিপুর গ্রামের কৃষক সুশীল সরকার, ফতেপুর গ্রামের ফয়সাল মিয়া, চানগাঁও গ্রামের রহমতুল্লাহ বলেন, ‘আগে আমাদের যে জমিতে শুধু পাট চাষ হতো, সেই জমিতে এখন ধানসহ তিনটি ফসল উৎপাদন করতে পারছি। আমন ধান কাটার পর পরই সরিষার চাষ করেছি। কৃষি অফিস বিনা মূল্যে সার,বীজ দেওয়ায় আমরা উৎসাহিত হয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের তুলনায় সরিষা চাষে এ বছর অধিক লাভবান আমরা।

 

চাষিরা আরও বলেন, এক কাঠা জমিতে ধান হয় সাত থেকে আট মণ। বাজার মূল্যে যা বিক্রি করে আমরা পাই পাঁচ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে লাভ তেমন থাকে না। কিন্তু এক কাঠা জমিতে সরিষা চাষে পাওয়া যায় এক থেকে দেড় মণ। যার বাজার মূল্য ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। ধানের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম থাকায় অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব হচ্ছে সরিষাতে। তাছাড়াও খাঁটি তেল খেতে ও ব্যবহার করতে পারছি।

 

মদন উপজেলার রত্নপুর, মৈদাম, চানগাঁও, তিয়শ্রী, কাইটাইল, নায়েকপুর, ফতেপুরসহ সদর ইউনিয়নে সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে। উপজেলার এক হাজার ৯০০ কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে এক কেজি করে সরিষা বীজ ও ২০ কেজি করে সার দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরিষা চাষের পদ্ধতি বিষয়ে চাষিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এতে একমাত্র ধান নির্ভর উপজেলার চাষিরা বিনা খরচে লাভের মুখ দেখছে।

 

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, জেলার ১০টি উপজেলার ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭,৪১০ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এবার আবাদ বেশি হওয়ায় উৎপাদন বেড়ে ৯ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছর জেলায় ৫ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। তার আগের বছর চাষ হয়েছিল ৫ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে।

 

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. নুরুজ্জামান জানান, এবার জেলায় প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯ জাতের সরিষার চাষ বেশি করা হয়েছে। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরিষার চাষ হয়েছে কলমাকান্দা ও পূর্বধলায়। কলমাকান্দায় ৯৭২ হেক্টর ও পূর্বধলায় ৯৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এরপর সদর উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর, মদন উপজেলায় ৬৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। সবচেয়ে কম আটপাড়ায়, ওই উপজেলায় মাত্র ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। তবে হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরিতে এবার ৪০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। গত বছর ওই উপজেলায় ৩৯০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল।

 

নেত্রকোনা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আবদুল্লাহ আল মাহমুদুন নূরবলেন, নেত্রকোনায় সরিষার আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। সরিষার চাষে এগিয়ে আসতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এজন্য অনেক কৃষককে সরকারীভাবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এবারের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি। ভবিষ্যতে জেলায় সরিষার চাষ ও উৎপাদন বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হবে


আপনার মতামত লিখুন :

মতামত লিখুন

এই বিষয়ের আরও খবর

এইমাত্র পাওয়া

No video found!

May 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

No video found!