• ঢাকা, বাংলাদেশ মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
  • [কনভাটার]

হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ছোঁয়া

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি; / ২১ জন দেখেছেন
আপডেটঃ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ছোঁয়া লেগেছে।

 রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি

 

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসির ছোঁয়া লেগেছে। মাঠ জুড়ে বাতাসে দুলছে পাকা ধানের সোনালি শীষ। তীব্র দাবদাহের মাঝেও ধান কাটা আর মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা।

সরেজমিনে নেত্রকোনা জেলার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, হাওরাঞ্চলে কৃষকদের সারা বছরের একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো ধান। তাদের হাড়ভাঙ্গা কষ্টে ফলানো সোনার ফসল যাতে আর কোন ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে ক্ষয়-ক্ষতি না হয়, তাই পাকা ধান ঘরে তুলতে কৃষাণ-কৃষাণীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সর্বত্রই চলছে ধান কাটা, মাড়াই ও ধান সিদ্ধ করে তা শুকানোর ব্যস্ততা। ধান কাটা ও মাড়াই করে গোলায় তোলার ব্যস্ততায় হাওরাঞ্চলে কৃষকদের মাঝে এক ধরণের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

হাওরাঞ্চলের কৃষকরা আশা করছেন, শেষ মুহূর্তে উজানের ঢলের মতো দুর্যোগের কবলে না পড়লে হাওরের পুরো ধান গোলায় তুলে লাভবান হবেন তারা। ফলন ভাল হওয়ায় এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ।

মদন উপজেলার বালালী গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কয়রা হাওরে এবার আমি বোরো ধান চাষ করছি। বরাবরের তুলনায় এইবার ফসলও ভালা অইছে। অহন যেবায় ধান কাটা লাগছে, লগে আবার রোইদো দিছে আশা করতাছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই আমরা ধান কইট্যা ফালায়াম আর ফসলও ঘরে তুইল্যা ফালাইয়াম।

খালিয়াজুড়ি উপজেলার লেপসিয়া গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন চন্দ্র দাস বলেন, আমি এবার হাওরে ৪০ কাঠা জমিতে বোরো আবাদ করছি।

তিনি আরও বলেন, ‘ধানের দামও ভালা পাইতাছি। ভিজা ধান ক্ষেত থেইক্যাই ৮৫০ থেকে ৮৬০ টাকা মণ দরে বেপারিরা নিতাছেগা। আমরার কেরিং খরচও নাই। তাই আমরা খুশি।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলার হাওরাঞ্চল, সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ ৩০ হাজার কৃষক মোট ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। এর মধ্যে জেলার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী ছাড়াও কলমাকান্দা, আটপাড়া ও বারহাট্টার একাংশ নিয়ে হাওরাঞ্চলের ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার কৃষক আবাদ করেছেন।

তারা আরও জানায়, জেলায় এ বছর ১২ লাখ ৩ হাজার ৯০০ মেট্রিকটন ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন। হাওরে ৬১৩টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন ধান কাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে কৃষকের খরচ যেমন কম হচ্ছে, তেমনি শ্রমিক নিয়েও সংকট নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাওরে প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। জেলার সমতল ও পাহাড়ি অঞ্চলেও বোরো ধানের আগাম জাত কিছু কিছু জমিতে পাকায়, সেখানে কাটা শুরু হয়েছে। পুরো জেলায় মাঠে মোট ৮৫০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার মেশিন সচল রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা বলছেন, অনুকূল আবহাওয়া, বীজ, সার, সেচ-সবই প্রয়োজন মতো সঠিক সময়ে পাওয়ায় হাওরজুড়ে এবার বোরো ধানের উফশি ও হাইব্রিড জাতের অভাবনীয় ফলন হয়েছে। চারদিকে ধান আর ধান। হাইব্রিড আর উফশি মিলিয়ে গড়ে একরে ৮০ মণ ধান ফলন হচ্ছে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান জানান, ‘হাওরে ৫৬০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ৫৩টি রিপার মেশিন এবং ১২০০ কৃষি শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। এবার শ্রমিক সংকট নেই। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে খুব দ্রুত সময়ে ধান কাটাসহ ধানের ফলন ও দাম ভাল হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

তিনি বলেন, ‘হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় একদিকে কৃষকদের জমি থেকে ধান পরিবহন খরচ কম হচ্ছে, অপরদিকে হাওর থেকে সরাসরি ট্রাকে করে সেই ধান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন মোকামে। এ অবস্থায় কৃষকরা আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা মাঠ থেকেই প্রকারভেদে ৮৪০ থেকে সাড়ে ৯০০ টাকা দরে কিনে নিচ্ছেন ভেজা ধান। হাওরে এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন ধান। তবে ফলন ভাল হওয়ায় আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আরও ৩০ হাজার মেট্রিকটন ধান বেশি উৎপাদন হবে। আশা করছি আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে হাওরের ধান কাটা শেষ করা সম্ভব হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মতামত লিখুন

এই বিষয়ের আরও খবর

এইমাত্র পাওয়া

No video found!

May 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

No video found!