সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার ধানকুনিয়া হাওরে ধানকুনিয়া জলমহলের মাছ ধরার জন্য আসা জেলে সম্প্রদায়ের খলার অস্থায়ী ঘরে (ডেরায়) ডাকাতির ঘটনায় সালাউদ্দিন নামে
(৩৫)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সালাউদ্দিন উপজেলার সুখাইর রাজাপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের মৃত শামসু মিয়ার ছেলে।
গত রাত ৮ টারদিকে রাজাপুর বাজারে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ মার্চ ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের অন্তর্গত ধানকুনিয়া জলমহলের তীরে জেলে সম্প্রদায়ের খলার অস্থায়ী ঘরে রাত সাড়ে ১২ টায় ডাকাতি ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ডাকাতিকালে পূরুষ লোকজন ছাড়াও মহিলা ও এক কিশোরী ডাকাতদের হাতে অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ডাকাতিকালে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এমন বিষয় ছিল এলাকায় আলোচনার মূল বিষয়বস্তু। মামলা হয়েছে শুধু ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
মামলার এজাহারে জানা যায়, ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক গ্রামের বাদল দাস সহ বিভিন্ন গ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা এক দলভূক্ত হয়ে ইজারাদারের সাথে চুক্তি করে প্রতি বছর ধানকুনিয়া জলমহলের মাছ ধরার জন্য আসেন। জলমহলের তীরে মাছ শুকানোর খলা তৈরি করে অস্থায়ী ঘর বেঁধে গরু- বাছুরসহ কার্তিক মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত তারা স্বপরিবারে বসবাস করে থাকেন ।
কিন্তু চলতি বছেরর ২৪ মার্চ রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ধানকুনিয়া জলমহলের খলায় গভীর রাতে হানা দেয় ডাকাত দল। বাহিরে থাকা পাহারাদার ও ঘরে থাকা
লোকদেরকে হাতে-পায়ে বেঁধে মারধর করে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের ১২ টি গরু, ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ২০০ কেজি শুটকি মাছ, মোবাইল ফোন ও নগদ ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। পরে ২ দিন পর ১১ টি গরু উদ্ধার হয়।
এছাড়া আরো জানা যায়, ডাকাতিকালে পূরুষ মহিলা সকলকেই বেঁধে ফেলা হয়। পরে খারাপ উদ্দেশ্যে ৪২ বছর বয়সের মা ও ১০ বছর বয়সের কিশোরী কন্যাকে পৃথক কক্ষে নিয়ে বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। রক্ষা পাওয়ার জন্য বার বার ডাকাতদের পায়ে ভক্তি দিয়েও রক্ষা পায়নি বলে ভিডিও রেকর্ডের মাধ্যমে আহাজারি করে বলেছেন নির্যাতিত কিশোরীর মা। নির্যাতিত মহিলা বলেন,পায়ে ভক্তি দিয়েও রক্ষা পাইনি। ডাকাতরা যা করার তাই করেছে। ঘটনার পর রাতেই ওই কিশোরীকে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। এ ঘটনায় বাদল দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে আসামি করে ধর্মপাশা থানায় মামলা করা হয়েছে।
ঘটনার পর দিন জেলেদেরকে জলমহলের ইজারাদার দেলোয়ার হোসেনের আশ্রয়ে নেওয়ার পর থেকেই নিজেদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলেনি নির্যাতিত মহিলারা।
মামলার বাদী বাদল দাস বলেন, ডাকাতিকালে ডাকাতরা মহিলাদেরকে মারধর ও টানাহেছরা করেছে। মামলার এজাহারে মহিলাদেরকে নির্যাতনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি কেন তা জানতে চাইলে সদোত্তর দিতে পারেননি।
সুখাইর রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাসরিন সুলতানা দিপা বলেন, ১৭ জন আসামি সকলকে খুজে বেরকরে গ্রেপ্তার করতে হবে। ঘটনার দিন আমি সুনামগঞ্জ ছিলাম, পরের দিন এসে এলাকার লোকজনের কাছে জানতে পারলা ধানখুনিয়া খলায় ডাকাতি ও ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। সটিক তদন্ত করে প্রকৃত আসামিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাই।
এ ঘটনায় মহিলাদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জ মো.মিজানুর রহমান বলেন, মহিলাদের উপর নির্যাতন হয়েছে এমন কোন নির্ভর যোগ্য তথ্য পাইনি। তা ছাড়া পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাদী বা বাদীপক্ষ এমন কোন কিছু বলেনি।