• ঢাকা, বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন
  • [কনভাটার]
সর্বশেষ খবর
মাগুরায় দু’টি উপজেলায় বেসরকারী ফলাফলে রানাও রাজন বিজয়ী ফুলছড়িতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত আবু সাঈদ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিদর্শনে জেলা প্রশাসক ওপুলিশ সুপার ফুলছড়িতে চেয়ারম্যান প্রার্থী জি এম সেলিম পারভেজের ভোট বর্জন।  সাদুল্লাপুরে বিধি লঙ্ঘন করে জুনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়ার অভিযোগ মাগুরায় দু’টি উপজেলায় শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট গ্রহন সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের নতুন নির্দেশনা রাণীনগরেপুলিশের অভিযানে সাত মামলার আসামী আটক আগামীকাল মাগুরা উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভুল প্রতীক থাকায় নির্বাচন কর্মকর্তা বদলি

সাদা মনের আলী আকবর খান অনন্য কীর্তি গড়লেন

গোলাম সারোয়ার, ব্যুরো প্রধান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা / ৮৬ জন দেখেছেন
আপডেটঃ রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩

গোলাম সারোয়ার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্যুরো প্রধান

মো. আলী আকবর খান। বয়স ৮৫ ছুঁই ছুঁই। গাছের প্রতি রয়েছে তার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে বৃক্ষপ্রেমী এই মানুষটি গাছের পেছনে ছুটছেন দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে। প্রকৃতিকে শীতল করতে রেল লাইনের দুপাশে নিজ হাতে সারি সারি তাল লাগিয়ে এলাকায় এক অনন্য নিদর্শন  স্থাপন করেন।

ঢাকা-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া বাইপাস রেলপথের খড়মপুর থেকে আজমপুর, ও খড়মপুর থেকে সদর উপজেলার কোড্ডা এলাকার প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে ৫ হাজারের বেশি তিনি তাল গাছ লাগিয়েছেন।

তার লাগানো রেললাইনের দুই পাশে তাল গাছগুলো যেন ফুটিয়ে উঠেছে গ্রামীণ আবহের এক অনন্য চিত্রে। চারপাশে বিস্তৃত সবুজ মাঠের গ্রামীণ নির্মল পরিবেশ আর মুক্ত বাতাশ যেন এক ভিন্ন আবহের শোভা ছড়াচ্ছে।

উপজেলার উত্তর ইউপির রামধননগর গ্রামের মৃত সুলতান খানের ছেলে গাছ প্রেমী আলী আকবর খান। বর্তমানে তার স্ত্রী ও দুই পুত্র রয়েছে। গাছ লাগানোর পেছনে তার ছেলেরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন।

তিনি পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রেললাইনের দুই পাশে তাল গাছ লাগিয়ে সকলকে তাক লাগিয়েছেন। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন মাজার, মন্দির, কবরস্থান, স্কুল, হাট-বাজারসহ  বিভিন্ন জায়গাতে যেখানে সুবিধা পেয়েছেন তাল গাছের পাশাপাশি লিচু, বকুল ফুল, কৃষ্ণচুড়াসহ নানা প্রজাতির গাছ লাগিয়ে আসছেন। তার লাগানো ওইসব গাছের ছায়ার নিচে বসে শত শত মানুষ  গল্প করছেন।

তবে গাছ লাগানোকে তিনি সন্তান জন্ম দেওয়া ও লালন পালনের মতো মনে করেন। টাকার জন্য নয় একমাত্র ভালোবাসার ও স্মৃতি হিসাবে দৃষ্টান্ত  রাখতে  নিরলসভাবে এ কাজ করে যাচ্ছেন বৃক্ষপ্রেমী আলী
আকবর খান।

এদিকে ওইসব গাছগুলো পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি বর্তমানে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়ে উঠেছে। যতটুকু চোখ যায় শুধু তাল গাছ আর তাল গাছ চোখে পড়ছে। দৃষ্টি নন্দন তালগাছের  নির্মল বাতাস যে কাউকে মুগ্ধ করে তুলছে।  আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দুর-দুরান্ত  থেকে বিনোদন প্রেমী লোকজনরা ছুটে আসছেন।

আলী আকবর খান বলেন, ২০০৫ সালে আখাউড়া বাইপাস লিংক রেললাইন চালু হওয়ার পর তার এক কাছের বন্ধু সৃষ্টিশীল কাজ করার পরামর্শ দেন। তার বন্ধু তাকে  বলেন দুনিয়াতে কিছু সৃষ্টিশীল কাজ না করতে পারলে এ আসার কোনো মূল্য নেই। এরপর বেশ কিছু দিন এ নিয়ে চিন্তা শুরু করেন কি করা যায়। একপর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেন নতুন রেললাইনের পাশে পরিবেশ বান্ধব তাল গাছ লাগানোর। এরপর শুরু করেন তাল বীজ (আটি) সংগ্রহ।

তিনি আরো বলেন আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আশুগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গার মিষ্টির দোকান ও অন্যান্য স্থান থেকে শতশত  তাল বীজ সংগ্রহ করেন। এরপর ওই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেললাইনের দু’পাশে মাটির নিচে পুঁতে দেন। যখন যেখানে শুনেছেন বীজ সংগ্রহ করতে ছুটে চলেছেন। বীজ সংগ্রহে তার সঙ্গে নিয়মিত শ্রমিক কাজ করতো। তাল বীজ মাটিতে পুতে দিতে সকাল-বিকেল নিরলস পরিশ্রম করেন। যখন বীজ থেকে চারা উঠা শুরু হয় এরপর পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে উঠেন। রোপণ করা এসব তাল গাছ বজ্রপাত রোধে ভালো ভূমিকা রাখছে। নানা শ্রেণি পেশার লোকজন যখন তাল গাছের ছায়ার মধ্যে বসে থাকে তখন দেখে খুবই ভালো লাগে বলে জানায়।

এক দিকে তিতাস নদীর ওপর দিয়ে ব্রীজ ও ডাবল রেল লাইন, অন্য দিকে খড়মপুর মাজার শরীফ। বিস্তৃত মাঠের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে আঁকা বাকাঁ রেলপথ। সেই সঙ্গে রয়েছে সারি সারি তাল গাছ আর দক্ষিণা হাওয়া নির্ভেজাল নিশ্বাসে দর্শনার্থীদের যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। অপূর্ব মায়াভরা  সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আগত লোকদের কে মুগ্ধ করে তুলছে

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, তালগাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। তাছাড়া তালপাতার পাটি, তালপাতার পাখা, তালের রস, তালের গুড় তালের শাঁস দিয়ে সুস্বাদু মিষ্টি পিঠা তৈরি করা হয়। সেইসাথে তালের গাছ ও পাতা ঘরের কাজে ও জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়।

তাছাড়া গাছের যে কী পরিমাণ গুণাগুণ রয়েছে তা যেন বলার অপেক্ষা রাখে না। গাছ আমাদের যেমন অক্সিজেন দেয়, পাশাপাশি ফল দেয়, কাঠ দেয়, ঔষধি গাছ থেকে ওষুধসহ বিভিন্ন গাছ থেকে আমরা পাচ্ছি সূতা। আমাদের মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানসহ আমাদের গাছের কোনো বিকল্প নেই।

আলী আকবর খানের ছেলে আলীবুর্দি খান সুহেল বলেন, ছোট বেলা থেকেই দেখছি গাছের প্রতি বাবার অন্য রকম ভালোবাসা। নতুন লিংক রেললাইন তৈরি হওয়ার পর নানা জায়গা থেকে তালের আটি সংগ্রহ করে লাগিয়েছেন। গাছগুলো বড় হওয়ায় সকাল-বিকেল লোকজন গাছের নিচে বসে গল্প করছে তা দেখে খুবই ভালো লাগছে। যখন দেখি কোনো মানুষ বাবার লাগানো গাছ কাটছে তখন খুবই খারাপ লাগে।

তিনি আরো বলেন, বাবা কোনো স্বার্থ নিয়ে এসব গাছ রোপণ করেননি। পরিবেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসায় রোপণ করেছেন এসব তাল গাছ। বাবার এই মহৎ কাজের জন্য আমরা গর্বিত।

উপজেলার উত্তর ইউপির চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান বলেন, আলী আকবর খান একজন সাদা মনের মানুষ। এ মানুষটি দীর্ঘ বছর ধরে পরিবেশ রক্ষায় নিয়মিত গাছ লাগিয়ে এলাকায় এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি শুধু গাছই লাগান না, এর পরিচর্যাও করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়াতে সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে তাল গাছ লাগানোর আহবান জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, মহৎ কাজ করার জন্য মহৎ মানুষের প্রয়োজন যা আলী আকবর খানের মধ্যে এই গুণটি রয়েছে। তার এই মহৎ উদ্যোগ সফল হউক। সরকারি কোনো সহায়তা থাকলে কিংবা আমাদের যদি কোনো ধরণের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি থাকে বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে অবশ্যই তাকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, পরিবেশ রক্ষায় ও বজ্রপাত ঠেকাতে তাল গাছের জুড়ি নেই। আলী আকবর খানের মতো সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে তালবীজ রোপণ করলে তালগাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ বজ্রপাত রোধে কাজ করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

মতামত লিখুন

এই বিষয়ের আরও খবর

এইমাত্র পাওয়া

No video found!

May 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

No video found!