• ঢাকা, বাংলাদেশ রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:২৪ অপরাহ্ন
  • [কনভাটার]

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা>মনিকা ইউনূস।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক / ৪১ জন দেখেছেন
আপডেটঃ মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৪
ছবি: সংগৃহীত >সিএনএনের সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সাংবাদিক ক্রিস্টিন আমানপোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে

বাংলাদেশের নোবেল বিজয় প্রফেসর ডঃ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ >সম্পূর্ণ মিথ্যা> ,বলে মন্তব্য করেছেন, ড. ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূস।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা ২৪২ বিশ্বব্যক্তিত্বের খোলা চিঠির বিষয়ে , আমার মনে হয় তার সমর্থনে চিঠি দেওয়া সব নোবেলজয়ীদের আহ্বানে যোগ দিয়ে এই সময়ে আমার কথা খুবই জরুরি , ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা তাই এর বিরুদ্ধে কথা বলাটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী এই প্রশ্নের জবাবে মনিকা ইউনূস বলেন,

অভিযোগগুলো মূলত তার কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেটা সাধারণভাবে দেওয়ানি আদালতেই নিষ্পত্তি সম্ভব কিন্তু এগুলোকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অর্থহীন। ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীরা শতভাগ নির্দোষ। আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞরাও বিষয়টি যাচাই করেছেন। তারাও বলেছেন, এই অভিযোগগুলো মিথ্যা।

বিশ্বব্যক্তিত্বের চিঠির পর এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রত্যাশা কী—জানতে চাইলে মনিকা বলেন, আমার প্রত্যাশা হলো ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে। এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন যে, আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞরা অভিযোগগুলো যাচাই করতে চাইলে তাদের স্বাগত জানানো হবে, আমি আশা করি সেটা করা হবে। আমি শতভাগ বিশ্বাসী যে সেটা করা হলে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ থাকবে না। কারণ তিনি অপরাধী নন।

সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টিন প্রশ্ন করেন, আপনার কি মনে হয় প্রধানমন্ত্রী আসলেই এটা করবেন? কারণ তিনি আপনার বাবাকে গরিবের শোষণকারী হিসেবেও অভিহিত করেছেন। সম্ভবত তিনি আরও একবার এটাও বলেছেন যে, ড. ইউনূসকে শিক্ষা দেওয়া দরকার। এরকম সংবাদ এসেছে যে, প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস ড. ইউনূস তার জন্য রাজনৈতিক হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছেন, ড. ইউনূস একটি রাজনৈতিক দল শুরু করতে চাচ্ছেন।

মনিকা বলেন, ড. ইউনূস রাজনীতিবিদ নন। আমার মনে করি, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া পর তিনি একবারের জন্য এটা ভেবেছিলেন। আমি মনে করি তিনি একাই একটি রাজনৈতিক দল। তার কোনো রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা দুজন কথা বলেছি এবং আমাদের আলোচনায় এটা বারবার উঠে এসেছে। কিন্তু এর যথার্থতা নেই।

প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছে, জানতে চাইলে মনিকা ইউনূস বলেন, তা আমি জানি না, আমি যতদূর জানি কোনো এক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ড. ইউনূস একসঙ্গে কাজ করেছেন, আমি আশা করি, সেই সময়টি আবার ফিরে আসুক, শুধু গ্রামীণ কিংবা সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানগুলোর ভালোর জন্যই নয়, যদি তারা আবারও একসঙ্গে কাজ করেন, তাহলে সেটা চমৎকার হবে।

মনিকা ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক সমাজে অনেক কিছু করার আছে, অনেক মানুষ আছে যারা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, এসব জায়গায় নজর দেওয়া উচিত। আমি একজন মার্কিন নাগরিক, কিন্তু আমার জন্ম বাংলাদেশে, আমি বাংলাদেশে ছিলাম সৃজনশীলতা ও অভিনবত্বের কারণে মানুষ বারবার বাংলাদেশে ফিরে যায়, খুব সম্ভবত সেখানে গিয়ে উদ্ভাবনী কাজগুলো দেখে তারা আকৃষ্ট হয়,

গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ে মনিকা বলেন, ড. ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক এমন বিষয়ের দিকে নজর দেয়, যেগুলোতে অন্য প্রচলিত ব্যাংক দেয় না, একটি প্রচলিত ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হলে গ্যারান্টি দিতে হয়। কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক থেকে মানুষকে উপার্জনে সহায়তা করতে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া হয়। দরিদ্রদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্রদের এই ঋণ দেওয়া হয়, যেখানে বিশেষ গুরুত্ব পান নারীরা। এই ব্যাংকের বেশিরভাগ গ্রাহকই নারী।

তিনি জানান, ২০ বছর আগে দেওয়া এক বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, আমি গর্ব করে বলতে পারি যে, গ্রামীণ ব্যাংকের সব গ্রাহকের সন্তানরা স্কুলে যায়। ‘বাবার এই বক্তব্যটা আমার খুবই প্রিয়। কারণে স্কুলে যাওয়া সেই শিক্ষার্থীদের বয়স এখন আরও ২০ বছর বেড়েছে। তারা এখন আমার বাবার কাছে গিয়ে বলছে, তাদের কাজ দিতে। তারা বলছে, তাদের মায়েরা অনেক কিছু করেছে। তারা কীভাবে তাদের জীবনকে আরও উন্নত করব। তাদের অনেককে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণও দেওয়া হচ্ছে। তাদের অনেকে চিকিৎসকও হচ্ছেন। ২০-৩০ বছর আগেও এটি অসম্ভব ছিল।’

গ্রামীণ ব্যাংকে নারীদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে মনিকা বলেন, শুরুতে পুরুষদের ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেলে তারা সেই অর্থ পরিবারের পেছনে ব্যয় করছে না। সেই কারণে নারীদের দিকে নজর দেওয়া শুরু হলো। গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষেত্রে এখন ঋণ পরিশোধের হার প্রায় ৯৮ শতাংশ। নারীরা ঋণ পরিশোধ করে। তাদের অনেকে বৃহৎ আকারের ঋণ নেয় এবং বড় ব্যবসা শুরু করে। এতে সার্বিকভাবে নারীদের ক্ষমতায়ন বাড়ছে।

গ্রামীণ ব্যাংক নারীদের ঋণগ্রস্ত করে তুলছে এবং সারাজীবন ধরে তাদের এই ঋণ পরিশোধ করতে হয়—এই অভিযোগের জবাবে মনিকা বলেন, আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু আমার কাছে বিষয়টি খুব সহজ। এটা খুব সুনির্দিষ্ট একটি মডেল, যেটা সঠিকভাবে অনুসরণ করা না হলে অন্য যেকোনো জিনিসের মতোই তা ব্যর্থ হতে পারে। যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করলে যেকোনো কিছুই ব্যর্থ হতে পারে। আমার ধারণা, এই সমালোচনা তাদের কাছ থেকেই এসেছে যারা গ্রামীণের দেওয়া সুনির্দিষ্ট মডেল অনুসরণ করেননি।

বিরোধীদল বলছে যে, তাদের ২৫ লাখ কর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কারণে অভিযোগ আনা হয়েছে। একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?—এমন প্রশ্নের জবাবে মনিকা বলেন, অন্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যদি নির্বাচনে শুধু একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে সেটা গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে কী বার্তা দিচ্ছে? আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে পারি যে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস ও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই-সেক্রেটারি বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন এবং জানিয়েছেন এটি উদ্বেগজনক।

৮৩ বছর বয়সী ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কেন এরকম অভিযোগ আনা হলো—প্রশ্নের জবাবে মনিকা বলেন, এর উত্তর আমার জানা নেই। তিনি তো সরকারের সঙ্গেও কাজ করেছেন। আমার মনে হয়, এসব ভিত্তিহীন-মিথ্যা অভিযোগ-মামলায় সময় নষ্ট না করে আবারও সরকার ও ড. ইউনূসের একসঙ্গে কাজ করার সময় এসেছে, তাকে প্রায় ১০ বছর ধরে এই ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ড. ইউনূস দেশ ছেড়ে যাবেন না, এই প্রসঙ্গে মেয়ে মনিকা ইউনূস বলেন, সারাজীবন ধরে তিনি দারিদ্রমুক্ত বিশ্ব তৈরির স্বপ্ন নিয়ে কাজ করেছেন এবং বাংলাদেশে সহকর্মীদের নিয়ে তিনি এই যাত্রা শুরু করেছেন। এরকম আরও হাজারো মানুষ এই স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন যাদের এই কাজ এখন হুমকির মুখে। তারা এখনো এই কাজটি অব্যাহত রেখেছেন। 


আপনার মতামত লিখুন :

মতামত লিখুন

এই বিষয়ের আরও খবর

এইমাত্র পাওয়া

No video found!

May 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

No video found!