• ঢাকা, বাংলাদেশ সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন
  • [কনভাটার]

নওগাঁর হাটগুলোতে করপোরেট ও মিলারদের বেঁধে দেয়া দামে কেনা-বেচা হচ্ছে ধান, নায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষকরা

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন ব্যুরো প্রধান নওগাঁ জেলা / ৮২ জন দেখেছেন
আপডেটঃ শনিবার, ২৯ জুলাই, ২০২৩

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন ব্যুরো প্রধান নওগাঁ জেলা /

 

খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁয় গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মণ প্রতি ধান একশ’ টাকা থেকে দেড়শ’ টাকায় কমে কেনা-বেচা হচ্ছে। করপোরেট ও মিলারদের বেধে দেয়া দামে চলতি ইরি-বোরো ধান বিক্রি করে তাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগে, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যর্থতা ও বাজার ব্যবস্থায় সঠিক নজরদারি না থাকায় ধান-চালবাজির নৈরাজ্য চলছে। করপোরেট ও মিলারদের লাগাম নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি কৃষকদের ধানের নায্য মূল্য নিশ্চিত করে দেশে খাদ্যে নিরাপত্তায় দ্রুত সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে।
হাট-বাজার ঘুরে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের মধ্যে ধান-চাল উৎপাদনের অন্যতম বড় মোকাম নওগাঁ। ধানকে কেন্দ্র করে নওগাঁয় প্রায় এক হাজার হাসকিং এবং ৫৪ টি অটোরাইস মিল গড়ে উঠেছে। এছাড়া দেশের শীর্ষ পাঁচ-ছয়টি করপোরেট ব্যবসায়ী গত কয়েক বছর থেকে চাল উৎপাদন শুরু করেছে।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলায় প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। ধান চাষে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা যখন ধানের নায্য দাম পাওয়ার আশায় দিন গুণছিলেন তখন করপোরেট ও মিলারদের বেধে দেয়া দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। হাট-বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকলেও মিল ব্যবসায়ীরা ধান কিনছে না। ফলে প্রায় প্রতি হাট-বাজারে মণে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা কমছে ধানের মূল্য। গত দুই সপ্তাহে মণ প্রতি ধানে কমেছে একশ’ টাকা থেকে দেড়শ’ টাকা। ধান উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে ধান বিক্রি হওয়ায় কৃষকদের গুনতে হচ্ছে লোকসান।
বর্তমানে হাট-বাজারে মোটা জাতের হাইব্রিট ধান ৮০০ টাকা থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকা এবং চিকন জাতের ধান ১১শ’ টাকা থেকে ১২শ’ টাকায় কেনা-বেচা হচ্ছে। জিরাশাইল কাঁচা ধান কেনা-বেচা হয়েছে ১১শ’ টাকা থেকে ১২শ’ টাকা, বিআর ৯০ চিকন জাতের ধান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১২শ’ টাকা থেকে সাড়ে ১৩শ’ টাকায়।
মহাদেবপুর উপজেলার সরস্বতীপুর হাটে আমজাদ হোসেন, করিম উদ্দিন, সাজ্জাদ হোসেন মন্ডল, আবুল কালাম আবু সহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ধান কাটা-মাড়াইয়ের সময় চিকন জাতের জিরাশাইল কাঁচা ধান কেনা-বেচা হয়েছে ১২শ’ টাকা থেকে ১৩শ’ টাকা, বিআর ৯০ চিকন জাতের ধান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৩শ’ টাকা থেকে ১৪শ’ টাকা, আর মোটা জাতের হাইব্রিট ধান ৯শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায়।
তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের ব্যর্থতা ও বাজার ব্যবস্থায় সঠিক নজরদারি না থাকায় উৎপাদনকৃত ধান বিক্রি করে কৃষকদের লোকসান গুণতে হচ্ছে।
একাধিক ফরিয়া ব্যবসায়ীরা জানান, বৈশিক কারণে বিশ্বে খাদ্যে ঘাটতি হবে এমন শঙ্কায় দেশের শীর্ষ করপোরেট ও মিলাররা ইরি-বোরো কাটা মাড়াইয়ের শুরুতে কম দামে পর্যাপ্ত ধান কিনে অবৈধ্যভাবে মজুত করে। তবে বর্তমানে খাদ্যে ঘাটতি শঙ্কা না থাকায় শীর্ষ করপোরেট ও মিলাররা সেই ধান থেকে উৎপাদিত চাল বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে বেশি লাভ করছেন অন্যদিকে বর্তমানে বাজারে ধান সরবরাহ কম থাকলেও ধানের কম দাম বেঁধে দিচ্ছে তারা। ফলে প্রতি সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা মণে ধানের দাম কমে যাচ্ছে।
নওগাঁর সিপিবি’র সভাপতি ও ধান-চাল বিশেষজ্ঞ এ্যাডভোকেট মহসিন রেজা জানান, কৃষকরা ইরি-বোরো ধান উৎপাদনের পর ধান বিক্রি করে ঋণ-দেনা শোধ করেন কাঁচা ধান বিক্রি করেন। এরপর হাতে থাকা ধানের একটু ভালো দাম পাওয়ার আশায় তাদের বাড়ির গোলায় রেখে দেন। সেই ধানগুলো কৃষকরা বর্তমানে বিক্রি করতে হাটে এসে নায্য দাম পাচ্ছেন না।
তিনি আরো বলেন, নওগাঁর হাট-বাজারে ধানের সরবরাহ কম থাকলেও করপোরেট ও মিলারদের সিন্ডিকেটে নায্য মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে জেলার কৃষকরা ধানের বিকল্প হিসেবে আমসহ অন্য ফসলে ঝুঁকে পরেছেন। আগামীতে ধানের বিপরীতে আমসহ অন্য ফসলের উৎপাদন অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের ধানের নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে আগামীতে দেশে খাদ্যে নিরাপত্তায় হুমকির মূখে পরার আশঙ্কা রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
নওগাঁ জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন জানান, অতিরিক্ত মজুদদারদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর আইন প্রণয়ন করায় ব্যবসায়ীরা ধান কেনা কমে দিয়ে মজুদকৃত চাল বাজারে বিক্রি শুরু করেছেন। এছাড়াও বিদেশে থেকে ৫ লাখ মেট্রিকটন চাল আমদানির সংবাদ প্রচার হওয়ায় ধান ক্রয় আরো বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে ধানের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকা কমেছে।
বাজার ব্যবস্থায় সঠিক নজরদারি না থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে নওগাঁ কৃষি-বিপণন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, নওগাঁয় কয়েকটি করপোরেট ব্যবসায়ী চাল উৎপাদন করছে। ইত্যে মধ্যে একটি করপোরেট ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। তাদের লোকবল এবং বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে করপোরেট ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের উপর নজরদারি রাখা হয়েছে। অবৈধ্য মজুদের তথ্য নিশ্চিত হলেই সেখানে অভিযান পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

মতামত লিখুন

এই বিষয়ের আরও খবর

এইমাত্র পাওয়া

No video found!

May 2024
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  

No video found!